সমদর্শিতাকে আলিঙ্গনের ডাক

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

মাহমুদা খানম | শনিবার , ১১ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস, বিশ্বব্যাপী যা #ওডউ তথা ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ডড়সবহং উধু হিসেবেই পরিচিত। দিনভর নানা কার্যক্রম ও আয়োজনের মধ্যে দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী এই দিবসটি পালন হতে দেখেছি আমরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই দিবসটির ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছে ‘ঊসনৎধপব ঊয়ঁরঃু’। বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই দিবসটি পালনে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছিল ইংরেজিতে ‘উরমরঃঅখখ: ওহহড়াধঃরড়হ ধহফ ঃবপযহড়ষড়মু ভড়ৎ মবহফবৎ বয়ঁধষরঃু’, বাংলায় ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন/ জেণ্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ যা মূলত আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্য বিষয়টিরই প্রতিফলন।

আজকের এই লেখাটিতে আমরা উভয় প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব। ‘ইমব্রেইস ইকুইটি’র সহজ বাংলা হতে পারে ন্যায্যতা বা সমদর্শিতাকে আলিঙ্গন করা। নারী অধিকারের প্রশ্নে এই ‘সমদর্শিতা’ কেবল সুন্দর বা চমৎকার একটি শব্দ রূপেই নয় বরং এই ন্যায্যতার বিষয়টি নারী মুক্তির জন্য আবশ্যক একটি নিয়ামক। যা লিঙ্গ সমতার উপর আলোকপাত করে এবং যা প্রতিটি সমাজের মৌলিক অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করি। এর জন্য ন্যায্যতা এবং সমতার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারাটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘ইমব্রেইস ইকুইটি’ বিষয়টির লক্ষ্য হল ‘নারীকে কেবল সমান সুযোগ করে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়’ এসম্পর্কে বিশ্বজুড়ে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

তাই নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকল পাঠক আসুন আমরা এইবেলা ন্যায্যতা বা সমদর্শিতাকে আলিঙ্গনের মধ্যে দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। দেখুন, আমরা সবাই কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ন্যায্যতা বা সমদর্শিতার বিষয়টি গ্রহণ করতে পারি। বিষয়টি আমরা বলছি বলেই নয় বা এনিয়ে লেখালেখি হবে ও হচ্ছে বলেই নয়। বিষয়টি এমন কিছু যা আমাদের ভাবার, জানার, একে কদর করা এবং আলিঙ্গন করা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, নিঃশর্তভাবে ন্যায্যতা বা সমদর্শিতা মানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব তৈরি করা। এবং আমরা সবাই এতে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে পারি। আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজস্ব প্রভাব বলয়ের মধ্যে থেকেই একে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করতে পারি।

আমরা সকলেই জেন্ডারভিত্তিক গতানুগতিক ভাবনাসমূহের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারি, বৈষম্যকে দূরে হটাতে পারি, পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে সরিয়ে সর্বস্তরের নারীসত্তাকে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করতে পারি। আমরা সকলেই জানি যে সামষ্টিক সক্রিয়তাই পরিবর্তন ডেকে আনে। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে বৃহত্তর চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় আমরা একে স্বাগত জানাতে পারি। লিঙ্গ সমতা বিষয়ক চলমান কূটকাচাল কেবলমাত্র নারী আন্দোলনের সুন্দর সুন্দর উদাহরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই নারীদের সামষ্টিক পরিবর্তনের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অগ্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মিলিতভাবে, আমরা সবাই ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি।

যখন আমরা ন্যায্যতাকে আলিঙ্গন করি, তখন আমরা বৈচিত্রকে আলিঙ্গন করি, অন্তর্নিবেশকে আলিঙ্গন করি। আমরা সমপ্রীতি এবং ঐক্য গঠনের জন্য এবং নারীপুরুষের সম্মিলিত সাফল্য পরিচালনায় সাহায্য করার জন্যই সমদর্শিতাকে গ্রহণ করি। সমতা হল লক্ষ্য, আর সমদর্শিতা হলো সেখানে পৌঁছানোর উপায়।

কিন্তু আমরা কোন উপায়ে এই ন্যায্যতা বা সমদর্শিতাকে আলিঙ্গন করতে পারি? অমিত সম্ভাবনাময় নারীশক্তি থেকে আসা ভিন্নভিন্ন চিন্তা, উদ্ভাবন, অংশগ্রহণকে মূল্যায়ন এবং সমর্থনের মধ্য দিয়ে। আমরা কী করে সকলেই সমাধানের, উদযাপনের অংশ হতে পারি সেদিকে আলোকপাত করতে পারি, কেবল সমস্যা ঘেঁটে, তার প্রতিফলন ও প্রতিবিম্ব দেখে আফসোসের মধ্যে দিয়ে নয়। আর তাই আমরা আমাদের বন্ধু, পরিবার, সহকর্মী এবং সমপ্রদায়কে ন্যায্যতা অবলম্বন করতে উৎসাহিত করতে পারি। ইতিবাচক পরিবর্তনকে প্রভাবিত করার জন্য আমরা একসাথে কাজ করতে পারি। আমরা সবাই মিলে একটি নিরপেক্ষ তথা ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গঠনে সাহায্য করতে পারি।

আর ঠিক এই আশাবাদের উপর ভর করেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটি আমরা দেখে চলেছি। যেহেতু যেকোনো কাজেই নারীর অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি এবং বাংলাদেশ সে পথেরই আগুয়ান পথিক তাই ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন/ জেণ্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ প্রতিপাদ্য বিষয়টি এই দিবসটির তাৎপর্য অনেকাংশেই তুলে ধরেছে, বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই মনে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবছরে প্রায় ৪ লাখ রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধএগিয়ে যাবার পালা