প্রতি ৫ জনের একজন ভুগছেন উচ্চ রক্তচাপে

উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৭ মে, ২০২২ at ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি ৫ জনের ১ জন (২১%) উচ্চ রক্তচাপে (হাইপারটেনশন) ভুগছে। আর আক্রান্ত পুরুষদের দুই-তৃতীয়াংশই (৬৭%) জানেন না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। একইভাবে আক্রান্ত অর্ধেক নারীও (৫১%) জানেন না যে, তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর এ উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজনে ‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য তুলে ধরেন। দেশে প্রতি ৫ জনে ১ জনের উচ্চ রক্তচাপে ভোগার যে তথ্য উঠে এসেছে, এটি খুবই ভয়াবহ মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে অভিহিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ প্রায় ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ ছাড়া চলতে থাকে এবং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, হৃৎপিন্ডের ছন্দহীনতা, কিডনী রোগ, স্মৃতি শক্তি বিলোপসহ শরীরের রক্তনালীর বিভিন্ন অসুখ সৃষ্টি করে। এভাবে উচ্চ রক্তচাপ সারা বিশ্বজুড়ে ভোগান্তি ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত।
এদিকে, ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন তা নিয়ন্ত্রণ করুন ও দীর্ঘায়ু হোন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ (১৭ মে) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস।
বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রামেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে আজ (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে।
‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল সময়ের মধ্যে ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশে এবং নারীর ক্ষেত্রে এ হার ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে এমন নারী এবং পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ এবং ৪২ শতাংশ, যেখানে স্বাভাবিক ওজনের নারী এবং পুরুষের মধ্যে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ।
বিভিন্ন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মাঝে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান। দিনদিন এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ : বিশেষজ্ঞরা জানান, অধিকাংশ সময় উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগী জানেই না যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এ জন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জন অনুভূতির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অত্যাধিক উচ্চ রক্তচাপ ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, বিভ্রান্তি, উদ্বেগ, বুকে ব্যথা এবং পেশি কম্পনের কারণ হতে পারে।
ঝুঁকি বাড়ছে যে কারণে : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন একজন মানুষের ৫ গ্রাম লবণ খাওয়া দরকার। তবে দেখা যায় লবণ গ্রহণের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ দৈনিক ৯ থেকে ১১ গ্রাম লবণ ব্যবহার করেন। শুধু ভাত-তরকারিতে নয়, না জেনে বাইরের খাবার থেকেও তাদের শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। যে কারণে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও তৈলজাতীয় খাবার গ্রহণ এবং স্থুলতাও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির কারণ।
চিকিৎসকের পরামর্শ : সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রত্যেক ব্যক্তিকেই একবার করে ব্লাড প্রেশার মাপা উচিত। এতে যদি তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে এবং শুরুতেই সে জানতে পারে, তাহলে জীবন যাপন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলছেন, খাদ্যে লবণ সীমিত করতে হবে। পাতে লবণ পরিহার করতে হবে। লবণাক্ত খাবার যেমন ফাস্টফুড, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার কমাতে হবে। রান্নার তেল সীমিত করতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল, শস্য জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক আরো বলেন, মেদ বাহুল্য পরিহার করতে হবে। শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি দৈনিক কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে হবে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন ভূমিকা রাখতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিছু ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফার কারণে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা
পরবর্তী নিবন্ধমানুষকে ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষে পরিণত হওয়ার নামই লায়নিজম