পৃথিবী থেকে প্রথমবার দেখা গেল নেপচুনের রহস্যময় কালো বিন্দু

| সোমবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মতো পৃথিবী থেকে নেপচুনের ওপর ‘রহস্যময় কালো বিন্দু’ দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এইসব বিন্দু চিহ্নিত করতে ইউরোপের গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (এসো) তৈরি ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের (ভিএলটি) সহায়তা নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে আকারে বিশাল একটি বিন্দু পরীক্ষা করতে গিয়ে জোতির্বিদরা দেখেন, ওই বড় বিন্দুর পাশে আকারে তুলনামূলক ছোট ও উজ্জ্বল আরেকটি বিন্দু দেখা যাচ্ছে। এমন বিন্দু তারা এর আগে কখনোই দেখেননি। খবর বিডিনিউজের। নেপচুনের নীলচে বায়ুমণ্ডলে কেন এমন বিন্দু তৈরি হলো, সে সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের। তবে তারা আশা করছেন, এই বিষয়ে নতুন পর্যবেক্ষণ এলে তা এর সংশ্লিষ্ট তথ্য পেতে সহায়ক হবে।

ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী প্যাটফিক আরউইন বলেন, এমনই এক কালো বিন্দু প্রথমবার খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আমি চিন্তা করছি, এই স্বল্পজীবী ও অধরা কালো বস্তুগুলো আসলে কী?

এরই মধ্যে একটি সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তা হলো গ্রহটির মেঘগুলো সরে যাওয়ার কারণে এইসব কালো বিন্দুর উৎপত্তি ঘটে। অনুমান বলছে, এইসব বিন্দু তখনই গঠিত হয়, যখন গ্রহটির বায়ু কণাগুলো বায়ুমণ্ডলে বরফ ও কুয়াশার মিশ্রণ ঘটিয়ে বিন্দুর মূল স্তরের নিচে থাকা স্তরকে অন্ধকার করে ফেলে।

এইসব বিন্দু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কিছুটা জটিল। কারণ এগুলোর উৎপত্তির মতোই গ্রহের পৃষ্ঠ ছেড়ে এদের চলে যাওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। আর এগুলো টেলিস্কোপের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হয় বলে গবেষকরাও সহজে এদের পরীক্ষা চালাতে পারছেন না।

এর আগে এইসব বিন্দু দেখার জন্য নভোযান পাঠাতে বাধ্য হন বিজ্ঞানীরা। আর বিন্দুগুলো প্রথম চিহ্নিত করা হয় ১৯৮৯ সালে, যখন নেপচুন গ্রহের পাশ দিয়ে উড়ে গিয়েছিল নাসার ‘ভয়জার ২’ মহাকাশযান। তবে, এর কয়েক বছর পরই হারিয়ে যায় এটি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এইসব বিন্দু পরীক্ষা করতেন বিজ্ঞানীরা। ওই টেলিস্কোপ থেকে নেপচুনের বায়ুমণ্ডলে তুলনামূলক বেশি বিন্দু দেখা যেত। এমনটি ঘটার পর ভূপৃষ্ঠে থাকা টেলিস্কোপের মাধ্যমেও সেইসব বিন্দু শনাক্ত করতে সক্ষম হন জোতির্বিদরা, যা এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করার সুযোগ দিয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের গবেষক এবং এই বিষয়ে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সহলেখক মাইকেল ওং বলেন, মহাজাগতিক পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মানুষের সক্ষমতায় বড় এক অগ্রগতি এটি। প্রথম দিকে আমরা কেবল ভয়জারের মতো মহাকাশযান পাঠিয়ে এমন বিন্দু শনাক্ত করতে পারতাম। পরবর্তীতে আমরা সক্ষমতা বাড়িয়ে সেগুলোকে হাবলের মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করেছি। অবশেষে, প্রযুক্তি এতটাই এগিয়েছে যে আমরা পৃথিবীর মাটি থেকেই এগুলো দেখতে পারছি।

নতুন এই অনুসন্ধানে ভিএলটির মাল্টি ইউনিট স্পেকট্রোস্কোপিক এক্সপ্লোরার প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেপচুনের বিন্দু পরীক্ষার সুযোগ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলে নেপচুন থেকে ওই আলো কীভাবে নির্গত হলো ও এর এমন রং কোথা থেকে এল, সেইসব বিষয় পরীক্ষা করা যাবে। এর মানে দাঁড়ায়, বিন্দুর অবস্থানগত উচ্চতার পাশাপাশি তা কীভাবে নেপচুনের বায়ুমণ্ডলে এল সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন জোতির্বিদরা। এইসব কালো বিন্দু পরীক্ষা করতে গিয়ে নতুন এক চমকপ্রদ তথ্যও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তা হলো, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের আরেকটি উজ্জ্বল বিন্দু।

ওং বলেন, এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিরল এক গভীর উজ্জ্বল মেঘের মতো বস্তু খুঁজে পেয়েছি, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এমনকি মহাকাশ থেকেও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিমের ব্যবসা পরিচালনায় নীতিমালা প্রনয়ণের দাবি
পরবর্তী নিবন্ধএক ইলিশের দাম সাড়ে ৫ হাজার টাকা