পৃথিবীর বিস্ময় জাগানো রংধনু পাহাড়

সরোজ আহমেদ | বুধবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতি বড়ই রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা এই পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র সব উপাদান। বৃষ্টির দিনে আকাশে রংধনুর এক অনাবিল সৌন্দর্যের মেলা আমরা অনেকেই হয়তো দেখেছি। ভেবে দেখ তো বৃষ্টি ছাড়াই যদি প্রকৃতিতে দেখা মেলে রংধনুর তখন কেমন হবে। ভাবতেই অবাক লাগে তাই না?
অবাক করা ব্যাপার হলো, আমাদের এশিয়া মহাদেশেই এমন এক পাহাড় আছে, যাকে রংধনুর পাহাড় বললে একেবারেই ভুল হবে না। পাহাড়টির নাম ‘দাংজিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওগ্রাফিকাল পার্ক’। দেখলে মনে হয়, কেউ যেন দানবীয় তুলিতে রং বুলিয়েছে পাহাড়ের গায়ে।
২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল স্থানটি অর্ধ-জাতীয় জিওপার্কে পরিণত হয়। ২০১৬ সালের ১৬ জুন স্থানটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি ও সম্পদ মন্ত্রণালয় দ্বারা ‘ঝাংয়ে ন্যাশনাল জিওপার্ক’ নামকরণ করা হয়। ২০০৫ সালে চীনের ৩৪টি গণমাধ্যম রঙিন শিলা গঠনের জন্য খ্যাত এই স্থানটিকে চীনের অন্যতম সুন্দর ল্যান্ডফর্ম হিসেবে ভোট করে। ২০০৯ সালে ‘চাইনিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি’ ম্যাগাজিন ঝাংয়ে দাংজিয়া’কে ছয়টি সর্বাধিক সুন্দর ল্যান্ডফর্মগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বেছে নেয়। বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম চীনের এই অঞ্চল চীনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্যস্থল। এখানে পা রাখা মাত্রই পর্যটকদের চোখে ঝলসে ওঠে বেগুনি-নীল-আসমানি-সবুজ-হলুদ-কমলা-লালের বাহারি রঙে।
এই পর্বতশ্রেণির কোথাও সমতল, কোথাও বা উঁচু-নিচু আবার কোথাও মসৃণ যেখানে সবুজের পশরা বসিয়ে রেখেছে নানা রকমের গাছপালা। পাহাড়ের পাথরের সজ্জাগুলি বিভিন্ন রঙের পশরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। যদি দিনের শুরুতে বৃষ্টি হয় প্রকৃতি তাহলে আরো জাঁকজমক রূপ ধারণ করে।
ভূবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এই রঙিন পাহাড় তৈরি হতে সময় লেগেছে ২৪ মিলিয়ন বছর। টেকটনিক প্লেটের সরণের ফলে এই পাহাড়ের খাড়াইগুলো তৈরি হয়। কিন্তু তার গায়ে এই বিচিত্র রঙের বাহার ধরে অন্য কারণে। এই পর্বত মূলত: বেলেপাথরে তৈরি। হিমালয় গঠনের অনেক আগে থেকেই এই পাহাড় তৈরি শুরু হয়। বালি পাথরে জমাট বাঁধার সময়ে তাতে মিশে গিয়েছিল বিভিন্ন খনিজ, গাছপালার অবশেষ ইত্যাদি। সেই মিশ্রণগুলিই এই রঙিন দুনিয়া তৈরি করে।
ভূ-বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পাহাড়ের প্রাথমিক রঙটি কিন্তু টকটকে লাল। তার উপরেই ক্রমে জমেছে অন্য রঙের উপকরণ। ক্রমাগত পরিবর্তনে এই পাহাড় তার বর্তমান রূপটি ধারণ করেছে। উত্তর-পশ্চিম চীনের এই অঞ্চলটি আজ খুবই জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালো ছেলে
পরবর্তী নিবন্ধখলিল উল্লাহ কাশেম