পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

চবি ছাত্রলীগ ।। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সেলে কমিটির খসড়া জমা দেওয়ার আশ্বাস

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অনেকবার আশ্বাস দিলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এ নিয়ে অনেক কর্মসূচি পালন করে পদ প্রত্যাশীরা। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে বলে মনে করেন পদ প্রত্যাশী ও সাবেক নেতারা। বিভিন্ন সময় অনেকে অপরাধ করেও সাংগঠনিক দায়িত্ব না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
অপরদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় অনেকে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও রাজনৈতিক পরিচয়হীন হয়ে পড়েন। এতে অনেকে হতাশ হয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। অনেকে একটা রাজনৈতিক পরিচয় অর্থাৎ পদবির জন্য ক্যাম্পাসে পড়ে আছেন। এ নিয়ে অনেক নেতাকর্মী হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে সাংগঠনিক দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো চবি ক্যাম্পাসে সফরে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতিনিধি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে আসলে প্রধান ফটক আটকিয়ে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ব্যতিত বিভিন্ন গ্রুপের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী এতে অংশগ্রহণ করেন। জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির দাবিতে প্ল্যাকার্ড ও স্লোগান দেন। তাদের দাবি শীঘ্রই যাতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। ক্যাম্পাসে এসে সংবর্ধিত হওয়ার বদলে আন্দোলন দেখে চমকে যান কেন্দ্রীয় দুই নেতা। আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের শান্ত করতে শীঘ্রই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার আশ্বাস দেন তারা।
এসময় জিরো পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলও বক্তব্য রাখেন। এসময় আগামী ২৫ জানুয়ারি মধ্যে কেন্দ্রীয় সেলে কমিটির খসড়া জমা দেওয়া হবে বলে জানান সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া দপ্তরে গেলে, পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাবতীয় সহযোগিতা করবেন তারা। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ সম্পাদক হায়দার রহমান জিতু ও উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ নাজমুল ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, নানা সময় সংঘাতের কারণে কমিটি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এ শাখার নেতাকর্মীরা। গত পাঁচবছরে এ শাখার কমিটি হয়েছে মাত্র দুইবার। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই আলমগীর হোসেন টিপুকে সভাপতি এবং এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতের কারণে দুই দফা স্থগিতের পর ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কমিটি বিলুপ্ত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা থাকলেও ৩০ মাসেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি।
ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দূর্জয় বলেন, শত শত নেতাকর্মীর দীর্ঘদিনের দাবি কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বিভিন্ন সময় আশ্বাস দিলেও সেটা হয়নি। আজকে আমরা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সেটা জানিয়েছি। সেখানে সবার সামনে শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২৫ জানুয়ারির মধ্যে কমিটি কেন্দ্রে জমা দিবেন বলে কথা দিয়েছেন। এরপরও তারা না পারলে সেটার দায়-দায়িত্ব তারাই নিবেন।
সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এজন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেয়া হবে। আমরা এই আশ্বাস মেনে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু আজাদীকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় নেতাকর্মীরা তাদের দাবি দাওয়া পেশ করেন। আমরা কথা দিয়েছি সব ঠিকঠাক থাকলে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে কমিটির খসড়া কেন্দ্রীয় সেলে দেওয়া হবে। এড়াছা নতুন চমক হিসেবে হল-অনুষদ কমিটি দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিনমাস পর মৃত্যু দুই অংকে
পরবর্তী নিবন্ধআইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না সমমনা