পূজা-অর্চনায় চন্দনাইশে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দিঘী মেলা

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৮:৫৬ অপরাহ্ণ

কোভিড-১৯ এর কারণে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে পালিত হলো চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দীঘির মেলা।
মেলা উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোর থেকে পূজার্থীরা আসতে থাকেন উপজেলার বরমা ইউনিয়নের বাইনজুড়ি এলাকার শুক্লাম্বর দিঘীর পাড়ে। ভোর থেকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পূজার্থীর সংখ্যাও।
মেলা উপলক্ষে অন্যান্য বছর দীঘি সংলগ্ন এলাকায় বিশাল মেলা বসলেও এবার মেলা বসেনি বলে জানান শুক্লাম্বর মন্দির উন্নয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিমল দেব।
তিনি জানান, ভোর থেকে পূজার্থীরা সরকারি নির্দেশনা মতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দীঘি জলে স্নানের পর পূজা দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
আজ সকালে বাইনজুড়ি এলাকায় অবস্থিত দীঘির চর্তুর্দিকে শত শত পূজার্থীর ঢল। তাদের মধ্যে অনেকেই শীতের এ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে দীঘির জলে পূণ্যস্নান করছেন, দীঘির জলে দুধ ঢেলে দিচ্ছেন, দীঘিরপাড়ে শতবর্ষী অশ্বথ গাছের ডালে কেউ কবুতর উড়িয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ গাছের ডালে রঙিন সুতো বাঁধছেন।
সারাদিন শত শত নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোররা তাদের মনোবাসনা পূরণের মেলায় এ দৃশ্য দেখা যায়।
কাজল ভট্টাচার্য্য নামে ১৪ বছরের এক কিশোর তার পিতা-মাতার সাথে এসেছে বাঁশখালী থেকে। তার মনোবাসনা কী জানতে চাইলে সে জানায়, তার মানত ছিল দীঘির জলে পূণ্যস্নান করে অশ্বথ গাছের ডালে রঙিন সুতো বাঁধবে যাতে সে পড়ালেখায় ভালো করতে পারে এবং সুস্থ থাকে। এসময় সে কোনো একসময় এসে তার বাঁধা সুতো খুলে দিয়ে যাবে বলেও জানায়।
জানা যায়, শত শত বছর ধরে সনাতনী সম্প্রদায়ের মহামিলন ক্ষেত্র হিসেবে প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে এখানে বসে ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দীঘি মেলা। মনোবাসনা পূরণের মেলা হিসেবে সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে অধিক পরিচিত এ মেলা। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয় মেলা দেখতে আসেন স্থানীয় মুসলিম, বৌদ্ধসহ সব ধর্মের মানুষও।
জনশ্রুতি আছে প্রায় ৮০০ বছর আগে শ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য ত্রিপাঠি ভারতের নদীয়া থেকে চন্দনাইশের বাইনজুরী গ্রামে আসেন।
তিনি নিজে অশ্বথের চারা রোপণ করে সেখানে শক্তির আরাধনা শুরু করেন। কঠোর আরাধনায় তিনি ত্রিপুরা দেবীর কৃপা লাভ করে সেই অশ্বথমূলেই সিদ্ধি লাভ করেন।
পরবর্তীতে সেখানে খনন করেন বিশাল দীঘি কালক্রমে যা শুক্লাম্বর দীঘি নামে পরিচিতি পায়।
এই দীঘিকে ঘিরেই সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের বিশ্বাস, যেকোনো মনোবাসনা নিয়ে শুক্লাম্বর দীঘির জলে পূণ্যস্নান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ বিশ্বাসেই মানত নিয়ে প্রতি বছর এই দিনে দীঘির জলে পূণ্যস্নান করতে আসেন হাজার হাজার সনাতনী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ।
শুক্লাম্বর মন্দির উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হারাধন দেব বলেন, “এ বছর আমরা স্বল্প পরিসরে মেলার আয়োজন করেছি। শুধু দূরদূরান্ত থেকে আসা পূজার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পূজা দিতে পারেন তার ব্যবস্থাই ছিল।” কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে মেলা শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডকে মাদকমুক্ত করব: জহুরুল আলম জসিম
পরবর্তী নিবন্ধ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে মাহমুদুর রহমানের গণসংযোগ