পিঁপড়া: দুরদর্শিতাই টিকিয়ে রেখেছে কোটি কোটি বছর

রাজন বড়ুয়া | বুধবার , ৯ নভেম্বর, ২০২২ at ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

দুরদর্শিতার কারণে পিঁপড়া কোটি কোটি বছর ধরে এ পৃথিবীতে টিকে আছে। ছোট প্রাণী হলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে, পিঁপড়ার দুটো পেট রয়েছে। এতে ক্রান্তিকালের জন্য খাবার জমা রাখতে সুবিধে হয়। পিঁপড়ার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো আমাদেরও অনুকরণীয়। যেমন- এরা দলবদ্ধভাবে চলাচল করে। এদের দূরদর্শিতা প্রকট। অক্লান্ত পরিশ্রমী, দক্ষ সংগঠক। প্রায় প্রতিটি পিঁপড়ার মধ্যেই রয়েছে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দক্ষতা। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দলের প্রতিটি সদস্যের জন্য সহমর্মিতা। এদের উদারতা, সহনশীলতা, পরোপকারিতা, শৃঙ্খলাবোধ, বৈরি পরিস্থিতিতে টিকে থাকার লড়াই, ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা সর্বোপরি রুটিন মাফিক চলা এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পিঁপড়া ফর্মিসিডি গোত্রের এবং হাইমেনপ্টেরা বর্গের প্রাণী। একটি দলে কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার এমনকি লক্ষাধিক পিঁপড়াও থাকতে পারে। সেখান রাণী, শ্রমিক এবং পুরুষ পিঁপড়া থাকে। প্রায় সব শ্রমিকই বন্ধ্যা স্ত্রী। চিনিযুক্ত খাবার যেমন-ফল-ফুলের রস, পচনশীল মৃত প্রাণী, উদ্ভিদভোজী কীটপতঙ্গের দেহ নিঃসৃত মিষ্টি রস এদের পছন্দের খাবার। পিঁপড়া সাধারণত মাটির ঢিবি, গাছের কোঠরসহ বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে বাসা তৈরি করে।

ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ২২,০০০ এরও বেশি পিঁপড়ার প্রজাতির মধ্যে ১৫,৭০০ এর মতো প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ পিঁপড়া নিরীহ হলেও কিছু কিছু প্রজাতির পিঁপড়া আবার আগ্রাসী আচরণ করে। বুলডগ অ্যান্ট বিষাক্ত প্রজাতির একটি। এরা এদের বিষাক্ত হুল এবং চোয়ালের মাধ্যমে আক্রমণ করে ।

পিঁপড়া সবাই মিলে একটি প্রাণীর মতো দলগতভাবে আচরণ করে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য একসাথে দলগতভাবে সংগ্রাম করে। এন্টার্টিকা ও এ ধরনের কিছু এলাকা ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র পিঁপড়া দেখা যায়। তাদের সংগঠিত হওয়া, দ্রুত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার ক্ষমতা, রসদ জোগাড় করার দক্ষতা এবং নিজেদের রক্ষা করার পারদর্শিতার কারণে প্রায় যেকোনো বাস্তুসংস্থানে বিকাশ লাভ করতে পারে। পিপীলিকার শ্রমবন্টন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ এবং জটিল সমস্যা সমাধোনে যথেষ্ট দক্ষতা রয়েছে।

জানা যায়, বোলতার একটি বংশধারা থেকে পিঁপড়ার বিবর্তন ঘটেছে। যেখানে মানুষের আগমন মাত্র ৫০ লক্ষ বছরের কাছাকাছি কিংবা একটু বেশি, সেখানে প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে থেকে পিঁপড়ার অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। অর্থাৎ জুরাসিক যুগের শেষদিকেও তাদের অস্থিত্ব ছিল। পিঁপড়া সবসময় সারি বেঁধে চলতে ভালোবাসে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল প্রাণী। পেছনের পিঁপড়ে ফেরোমন নামক নি:সৃত হরমোনের গন্ধ শুঁকে শুঁকে সামনের পিঁপড়ার পথ অনুসরণ করে।

পিঁপড়ার কোনো কান নেই। হাঁটু এবং পায়ে বিশেষ সেনসিং ভাইব্রেশন রয়েছে। যার মাধ্যমে আশপাশের পরিস্থিতি বুঝতে পারে। এদের আবার কোনো ফুসফুসও নেই। কিন্তু শরীরে অনেক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যার মাধ্যমে শরীরের ভেতর ও বাইরে অঙিজেন চলাচল করে। বেশি বাতাস কিংবা অন্য কোনোভাবে অনেক উপর থেকে আছড়ে পড়লেও সাধারণত পিঁপড়া ব্যথা অনুভব করে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহেমন্ত
পরবর্তী নিবন্ধপ্রশিক্ষিত যুব শক্তিরাই আগামীর দেশ গড়বে