পাঁচ হাজার বইয়ের সংগ্রহ ও বইপ্রিয় এক শিক্ষক

বিশ্ব বই দিবস আজ

রাউজান প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনার আগ্রহ মানুষের সেই আদিকাল থেকে। যেসব মানুষ অজানাকে জয় করার চেষ্টায় থাকেন তাদের সঙ্গী হয় বই। বইয়ের সাথে বসবাসকারী এসব মানুষ সমাজে পরিচিতি পায় জ্ঞানী গুণী হিসাবে। অনেকের কাছে তারা বই পোকা। বিশ্ব খ্যাত কথাসাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের একটি উক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, একটি জিনিস মানুষের জীবনে বিশেষভাবে প্রয়োজন, সেই জিনিসটি হচ্ছে বই, বই এবং বই।

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এসে আমাদের সমাজে বইয়ের নেশায় আসক্তদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এখনও কিছু বইপ্রেমিক মানুষ বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের চেষ্টায় ও নতুন প্রজন্মের পাঠাভ্যাস গড়ার চেষ্টায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন। তারা দুর্লভ গ্রন্থশালা গড়ে তুলছেন আগামী প্রজন্মের জন্য।

রাউজানে এমন একটি দুর্লভ গ্রন্থশালা গড়ে তুলেছেন প্রিয়ম দে নামে এক শিক্ষক। বর্তমানে তার সংগ্রহে পাঁচ হাজার বই রয়েছে। ৩৬ বছর বয়সী প্রিয়ম নোয়াপাড়া রাজার পাড়া গ্রামের মৃদুল-রূপসী দম্পতির সন্তান। অনার্স-মার্স্টাস ডিগ্রী অর্জনের পর প্রিয়ম প্রথম শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে গিয়ে যোগ দেন চিকদাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষক হিসাবে। বর্তমানে সেখানে শিক্ষকতা করছেন তিনি। গতকাল প্রিয়মের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চর্তুরদিকে বইয়ের দেয়ালে ঘেরা একটি কক্ষে বই হাতে বসে আছেন তিনি। পাশে আরেক বইপ্র্রেমিক শিক্ষক শেখর ঘোষ আপন। রাউজান মহামুনি এ্যাংলো পালির উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখর আপন শিশু কিশোরদের নিয়ে পাঠাগার নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

প্রিয়মের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোটকাল থেকে দেখে আসছেন বাবা মৃদুল দে’র বই সংগ্রহে রাখার নেশা। মা রূপসী ছিলেন প্রখ্যাত প্রবন্ধিক ও সাংবাদিক প্রয়াত ছিদ্দিক আহমেদের ছাত্রী এবং বিভিন্ন স্বাদের বই পাঠক। মূলত পিতা-মাতার অনুপ্রেরণায় প্রিতমের নেশা জাগে বই সংগ্রহের। তার আগ্রহ অজানাকে জানার। বিশেষ করে বিজ্ঞান, গণিত, চিত্রকর্মের প্রতি ঝোঁক বেশি প্রিয়মের। তিনি এখন নিজের গ্রন্থশালার পাশাপাশি রোকেয়া পাঠাগার নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এই পাঠাগারের মাধ্যমে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিলিয়ে পাঠাভ্যাস গড়ছেন। তার এই সাধনার জন্য তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পক্ষে আধুনিক গণিত অন্বেষা নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা স্মারকও পেয়েছে।

প্রিয়ম বলেছেন, তার সংগ্রহে রাখা বইগুলো থাকবে আগামী প্রজন্মের জন্য। তিনি এ সংগ্রহশালাকে আরো সমৃদ্ধ করতে যোগ করতে চান আরো পাঁচ হাজার বই। এখন তার কাছে যেসব বই রয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্পী, সাহিত্যিকের লেখা।

আজ বিশ্ব বই দিবসে বইপ্রেমিক এ শিক্ষকের আহ্বান, জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় পাঠাগার স্থাপন করে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে হবে। এতে করে তরুণরা মাদক সেবনসহ সমাজের নানান অপকর্ম থেকে বিরত থাকবে। মোবাইলের প্রতি আসক্তি কিছুটা হলেও কমবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাশিয়াইশে ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই নিহত
পরবর্তী নিবন্ধখুরুশকুলে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ গোলাগুলি