নানা রঙের ব্যানার–ফেস্টুন হাতে মিছিলের পর মিছিল। সেই সাথে ব্যান্ডের তালে তালে রঙীন টিশার্ট ও ক্যাপ পড়া হাজার হাজার ছাত্র–যুবজনতার স্লোগান আর স্লোগান। বহুল প্রতীক্ষিত নগর যুবলীগের সম্মেলন জুড়ে ছিল এ রকমই প্রাণের উচ্ছ্বাস। গতকাল সকাল ১০টায় নগরীর দি কিং অব চিটাগাং–এ মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন হওয়ার কথা থাকলেও সম্মেলনের উদ্বোধন হয় দুপুর ১২টায়। কিন্ত ভোর ৬টা থেকে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে নগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থকরা ব্যান্ডপার্টিসহ নানান রঙের ব্যানার–ফেস্টুন সহকারে মিছিল নিয়ে পাঁচলাইশস্থ সম্মেলন স্থলে আসতে থাকে। বেলা ১১টা বাজতে বাজতেই সম্মেলনস্থলসহ পুরো আশপাশ এলাকার কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেলা ১২টায় আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলসহ সকল অতিথিদের নিয়ে জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেন, নির্বাচনে না আসলে বিএনপির অবস্থা ন্যাপের মতো হবে। সংবিধান মেনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া এদেশে কেউ আর কোনোদিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আর কোনোদিন ৭৫’ হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি যতো টেনে ক্ষমতা থেকে নামাবে বলে এ সরকারের মেয়াদ ততো বাড়তে থাকে। ২০০৯ সাল থেকে বলতেছে। সরকারের মেয়াদ তিন দফায় বেড়েছে। আমরা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকব ইনশাআল্লাহ।
অবৈধভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করলে সংবিধান অনুযায়ী তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এই বিধান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাতীয় সরকারের নামে জিয়াউর রহমানের স্টাইলে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কেউ করবেন না।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কারা আজ আমাদের গণতন্ত্র শেখায়? বিএনপি? এই বিএনপি ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল। তারা কখনোই গণতান্ত্রিক হতে পারে না। ১৯৭০ সালে নির্বাচন থেকে ন্যাপ সরে গিয়েছিল। বিএনপির অবস্থা ন্যাপের মতোই হবে। আর আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে।
সম্মেলনের উদ্বোধক আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ দেশে কিছু সংবাদমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় নেমেছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের সমালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই সমালোচনা যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তাহলে সমালোচনা করার অধিকার জনগণেরও রয়েছে। কিছু গণমাধ্যম সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কাজ করছে। আর এসব গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক শত্রু, এক–এগারোর কুশীলব, যখন এক হয় তখনই একটি সরকার সঙ্কটে পড়ে। সরকারের ভেতরে থাকা কিছু ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতার মধু খাওয়া মোশতাক তাদের দলে যুক্ত রয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের যুবসমাজ বরদাশত করবে না।
ষড়যন্ত্রকারীরা আরেকটি এক–এগারো আয়োজন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা চারিদিকে হতাশার বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে। আরেকটি এক–এগারো আয়োজন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে পরিকল্পিত নীলনকশা চলছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার চেয়ে কে বেশি যোগ্য? কে বেশি নিরপেক্ষ? তিনি ন্যায় নিরপেক্ষতার মূর্ত প্রতীক, সেটি তিনি তার যোগ্যতা দিয়ে প্রমাণ করেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় আনতে যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে পরিশ্রম করতে হবে।
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি যুবলীগ করতে চান পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে। দুর্নীতি দমনে শেখ হাসিনা সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতিবাজ যেইই হোক না কেন ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এমপি, মন্ত্রী কাউকেই ছাড়া হচ্ছে না।
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, প্রধান বক্তা ছিলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল। বিশেষ অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।
সম্মেলনে বিশেষ বক্তা ছিলেন আওয়ামী যুব লীগের যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম, সুব্রত পাল, মোহাম্মদ বদিউল আলম, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাইফুর রহমান সোহাগ, আবু মুনির মো. শহিদুল হক রাসেল, কাজী মাজহারুল ইসলাম, আবদুর রহমান, নাসির উদ্দিন মিন্টু, জয়দেব নন্দী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল হক সুমন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন। এটি পাকিস্তানিদের ভাষা। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন তিনি এখনো চেতনায় পাকিস্তানি। হানিফ আরও বলেন, যারা এখন জাতীয় সরকারের নকশা দিচ্ছে তাদের খায়েস হয়েছে মন্ত্রী, এমপি হওয়ার। আপনাদের সেই স্বপ্ন দিবা স্বপ্নই থেকে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা কদিন আগে রাজনীতির রসবোধ থেকে একটি কথা বলেছিলেন। তিনি পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে টুস করে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেটা নিয়ে বিএনপি রাজনীতি শুরু করলো। বললো তাদের নেত্রীকে নাকি হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আরে আহাম্মকের দল! খালেদা জিয়াকে তো পানিতে ফেলা হবে না। তাকে পদ্মা সেতু থেকে যখন ফেলা হবে তখন নিচে নৌকা থাকবে। সেই নৌকায় করে বেগম জিয়াকে পদ্মা সেতুর সব স্পেন ও পিলার দেখানো হবে। কেননা তিনিই বলেছিলেন এই পদ্মা সেতু জোড়া তালির সেতু। পদ্মা সেতুর উপরে ও নিচে দেখানো শেষে আবার গাড়িতে করে ঢাকায় পৌছে দেওয়া হবে।
সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে অনুরোধ করে বলেন, যাদের ১৯৯১ ও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আন্দোলন–সংগ্রামের ইতিহাস আছে তাদের কমিটিতে নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। তারা কী করেছে সেই ইতিহাস যেন ঘেঁটে দেখা হয়। সেই সাথে যেন দেখা হয় যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাও।
মহানগর আওয়ামী লীগের ঐক্য প্রসঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা জাতে মাতাল, তালে ঠিক’। বিএনপি সব সময় ষড়যন্ত্র করেছিল–এখনো করছে। আমদেরও সজাগ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা জাতে মাতাল তালে ঠিক। যে সময় দরকার পড়বে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হবো, সকল চক্রান্ত ষড়যন্ত্র অতীতের মতো সমানের দিনগুলোতেও প্রতিহত করব।
এসময় তিনি নগর যুবলীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, আমাদের নীতি–আদর্শও এক এবং অভিন্ন। আমাদের আদর্শ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন সেটিই হবে আমাদের আদর্শ। আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। আমাদের অবশ্যই জয় লাভ করতে হবে।