নির্ধারিত দরে মিলে না ডলার

সংকটে আমদানি বাণিজ্য

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ জুন, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

ডলার সংকট প্রকট হয়ে উঠায় ভয়াবহ রকমের সংকটে পড়েছে আমদানি বাণিজ্য। ছোটখাটো এলসি কোনোরকমে হলেও বড় বড় এলসি করতে গিয়ে আমদানিকারকদের দিশেহারা হওয়ার উপক্রম। ডলার মিলছে না ব্যাংকগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরের বহু বেশি দাম দিয়ে যোগাতে হচ্ছে ডলার। এতে করে ভোগ্যপণ্য এবং স্টিলসহ বিভিন্ন ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার বিক্রি না করে ব্যাংকগুলো নিজেদের মর্জি মাফিক দর নির্ধারণ করায় দিনে দিনে সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে ডলার সংকট প্রকট। বিশ্বের নানা দেশে এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বছরের শুরু থেকে ডলারের দাম নিয়ে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা হয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতির বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডলারের দাম। রাশিয়া এবং চীন নিজেদের মুদ্রাকে বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে। ডলারের বিপরীতে ওই দুইটি মুদ্রাকে শক্ত অবস্থান দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা খুব একটা সফল হয়নি। বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পুরোপুরি ডলার নির্ভর। এতে করে রাশিয়ান কিংবা চীনের মুদ্রার প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে এখনো শক্ত কোনো ভিত তৈরি করতে পারেনি। এতে বিশ্বব্যাপী ডলারের চড়া ভাবের প্রভাব বেশ মারাত্মকভাবে পড়ে বাংলাদেশে। চলতি বছরের শুরু থেকে গত ছয় মাসে অন্তত ১২ দফায় টাকার অবমূল্যায়ন করে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ৮ টাকা। এভাবে টাকার মান ক্রমাগত কমতে থাকায় অস্থির হয়ে উঠে দেশীয় বাজার পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৯২.৯৫ টাকা। ইন্টার ব্যাংক এবং কার্ব মার্কেটে এই দর ৯৬/৯৭ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনা সরকারি বেসরকারি কোনো ব্যাংকই মানছে না বলে অভিযোগ করে আমদানিকারকেরা বলেছেন, ব্যাংক নির্ধারিত দরে কোথাও ডলার জুটছে না। এমনিতেই হিসেব-নিকেশ সব পাল্টে গেছে। ডলারের চড়া মূল্যের কারণে পণ্য আমদানি করে হিসেব মিলানো কঠিন। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের চড়া দামের উপর ডলার প্রতি আরো ৩/৪ টাকা বেশি পরিশোধ করে এলসি পেমেন্ট করতে হচ্ছে।

একাধিক আমদানিকারক বলেছেন, কোনো কোনো ব্যাংক ২০ থেকে ৫০ হাজার ডলারের এলসি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত দরে করছে। কিন্তু এর থেকে বেশি হলেই আর বাংলাদেশ ব্যাংকের দর মানছে না। তখন চড়া দাম দাবি করা হচ্ছে। এমনকি ৯৬/৯৭ টাকা দরেও ডলার কিনে এলসি সমন্বয় করতে হচ্ছে।

ডলারের চড়া দামে বড় বড় এলসি করার পরিমাণ অনেকটা থমকে গেছে। ব্যাংকগুলো ছোটখাটো এলসি করলেও বড় এলসিগুলো করছে না। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য, স্টিলসহ লাখ লাখ ডলারের এলসি করতে গিয়ে আমদানিকারকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটি ব্যাংক পঞ্চাশ হাজার ডলার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত দরে এলসি করলেও বড় এলসির ব্যাপারে কেন বাড়তি দর হাঁকছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ডলারের বাজারে বিরাজিত বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে না পারলে মুদ্রাস্ফীতিসহ সার্বিক অর্থনীতি আরো সংকটে পড়বে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতা মাহফুজুল হক শাহ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডলার নিয়ে চরম এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। বহু বড় বড় কোম্পানি এলসি করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত দর কেউ মানছে না। আবার একই ব্যাংক একই সাথে দুই দরে ডলার বিক্রি করছে। সবকিছু মিলে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে আমদানি বাণিজ্যে। যা দেশের সার্বিক জীবনযাত্রায় মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলবে। তিনি ডলার পরিস্থিতির উপর বিশেষ জোর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরিয়ে নিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনই সড়ক বাতির পোলে তার স্থাপন
পরবর্তী নিবন্ধক্লাসে ঢুকে শিক্ষিকার মাথা ফাটালো চোর