নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে

রাজাপাকসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, কারফিউ ওঠার পর কলম্বো ছাড়ার হিড়িক

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১৩ মে, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন বিরোধী দলের নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে রনিলকে শপথ পাঠ করান। সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রনিল। এদিকে মাহিন্দা রাজাপাকসের শ্রীলঙ্কা ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন দেশটির আদালত। এই নিষেধাজ্ঞা তাঁর ছেলে নামাল রাজাপাকসেসহ আরও ১৫ সহযোগীর জন্যও প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে বিক্ষোভ-সংঘাত দমাতে জারি করা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ গতকাল কয়েকঘণ্টার জন্য তুলে নেয়া হলে অসংখ্য মানুষকে বাসে করে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বো ছাড়তে দেখা গেছে।

বিডিনিউজের খবর থেকে জানা যায়, ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি নেতা ৭৩ বছরের রনিল বিক্রমাসিংহে এর আগে আরো পাঁচবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলেই ২০১৯ সালে একের পর এক বোমা হামলায় কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। সে বছর ২২ এপ্রিল মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে তিনটি হোটেল ও তিনটি গির্জাসহ মোট আট জায়গায় ভয়াবহ বোমা হামলায় ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল।

বর্তমানে স্বাধীনতার পর ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। তার উপর মাথায় চেপে আছে বিশাল অংকের ঋণের বোঝা। সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধ ও খাবারসহ সব কিছুর সংকট দেখা দিয়েছে। যার জেরে বিক্ষোভে উত্তাল হয় উঠেছে দেশটি।

গত সোমবার শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে ভয়াবহ সংঘাতে অন্তত নয় জন নিহত এবং তিনশর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বিক্ষোভের মুখে ওই দিন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসের পদত্যাগও দাবি করছেন। অন্যদিকে, গোটাবায়া দেশের এই সংকট কাটিয়ে উঠতে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট সরকার গঠন করার কথা বলে যাচ্ছিলেন।

রাজাপাকসের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : বাংলানিউজের খবর থেকে জানা যায়, বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য প্রতিটি বিমানবন্দরে নজরদারি চালাতে বলেছেন আদালত। মাহিন্দা রাজাপাকসের পাশাপাশি তাঁর সহযোগী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গত সোমবারের নাগরিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগেও নাগরিকদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বিক্ষোভকারীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ঘিরে ফেললে পরিবার নিয়ে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নেন তিনি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। আদালত তার সেই পথ বন্ধ করে দিলো।

কলম্বো ছাড়ার হিড়িক : বিক্ষোভ দমাতে সোমবার শ্রীলঙ্কাজুড়ে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়। নামনো হয় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর হাতে বিনা পরোয়ানায় যে কাউকে গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ, এমনকি প্রয়োজনে গুলি করার ক্ষমতাও তুলে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার থেকে চলা অনির্দিষ্টকালের ওই কারফিউ গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় কয়েক ঘণ্টার জন্য তুলে নেয়া হয়েছিল বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কারফিউ তুলে নেওয়ার পরপরই কলম্বোর বাসস্টপগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা দেয়। বাসেও প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তাদের বেশিরভাগই কলম্বো ছেড়ে নিজ নিজ শহরে চলে যেতে পথে নেমেছেন। স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে আবার কারফিউ জারি হয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নিলেও বাসস্টপ ছাড়া কলম্বোর সড়কগুলো বলতে গেলে নিরবই ছিল। অল্প কিছু মানুষ অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাড়ির বাইরে বের হয়েছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউখিয়ায় শিশুসহ ৬ রোহিঙ্গা দগ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধট্রাক ছিনতাই করে হেলপারকে হত্যা