রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে একসঙ্গেই চলতে হবে : মামুনুর রশীদ

চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সেমিনারসহ নানা আয়োজন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ at ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেছেন, বর্তমানে একটি ভয়ের অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যা থেকে ভালো এবং মহৎ কিছু আশা করা যায় না। রাজনীতি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে চলতে না পারলে এ বাধা কাটানো যাবে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিল্পীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা।

গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনদিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক। সূচনা বক্তব্য রাখেন গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন হাবিবুল আলম। মামুনুর রশীদ বলেন, দেশে শিল্পীদের এগিয়ে যেতে হবে সকলের কল্যাণে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিকল্প নেই। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সকল অপশক্তির বিনাশ সম্ভব। একমাত্র নাগরিক দায় থেকে গণসঙ্গীত শিল্পীরা সবার আগে দেশের সকল সংকটে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।

তিনি বলেন, প্রতিটি শিল্পীর নাগরিক দায় আছে। নাগরিক দায় পালন করতে গিয়ে কঠোর জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়। লালনকে কেন্দ্র করে বাউল গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। অথচ তারা এখন নিপীড়িত। কারণ, তাদের ধর্মপরিচয়। ধর্ম ব্যবসায়ীরা বাউলদের নির্যাতন করেন। বাউলদের গ্রাম ছাড়া করেছেন, চুল কেটে দিয়েছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিছু কিছু প্রতিবাদে কাজ হয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করেন। এজন্য শিল্পীদের ভূমিকা আছে। আমরা কিছু দায় মেটাতে পারছি, কিছু পারছি না।

মামুনুর রশীদ বলেন, যারা রাজনীতি করেন তারা এতটাই সমাজ বিচ্ছিন্ন যে, তাদেরও আমরা চিনি না। তারাও আমাদের চেনেন না। রাজনীতি আর সংস্কৃতি যদি একসঙ্গে চলতে পারত তাহলে সমাজ পরিবর্তন হতো। ভালোভাবে চলত। কিছুদিন আগে একজন রাজনৈতিক কর্মীকে হাতপা কেটে খুন করা হলো। এটি কেমনে সম্ভব? যারা তাকে মেরেছে তারাও রাজনৈতিক কর্মী। তাদের মধ্যে যদি সংস্কৃতির প্রভাব থাকত তাহলে তারা এসব কখনও করত না। তিনি বলেন, একসময় সংস্কৃতি এবং শিল্পীদের কাছে রাজনৈতিক কর্মীরা যেতেন। কাগমারী সম্মেলনে অধিকাংশ তোরণ ছিল শিল্পী, নাট্যকার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে। শিল্পী সাহিত্যিক লাগে রাজনৈতিক সংগঠনে। কল্যাণের কথা চিন্তা করলে শিল্পের কাছে আসতে হবে। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে যদি শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে না থাকত তাহলে তা সম্ভব হতো না। জীবন সংগ্রামে শিল্পের প্রতি দায় মেটায় সংস্কৃতিকর্মীরা। কিন্তু এখন তাতে ছেদ পড়েছে। সংগ্রামের পথ থেকে যে সংস্কৃতিকর্মী পলাতক তার পক্ষে শিল্প করা সম্ভব না।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রাষ্ট্রভাবনা ও সমাজভাবনা না থাকলে প্রকৃত শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। রাজনৈতিক পরিচয় অবশ্যই থাকতে হবে। কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন ছিল। তিনি তো ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছিলেন, সংগ্রাম করেছিলেন।

লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ শামসুল হক বলেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে আমরা সরে যাচ্ছি। এ দেশকে যখন সুন্দর অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। এরপরই সংস্কৃতিকর্মী আর লেখকেরা ভাগ হয়ে গেলেন। রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে শিল্পীরাও আলাদা হয়ে যান। একসময় এলাকায় যাত্রাপালা হতো, গণসংগীত হতো। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের পর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছে।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বিকালে দলীয় সঙ্গীত পর্বে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করে যশোরের দল পুনশ্চ, শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশন করে সিলেটের অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক আন্দোলনের গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা, শেখ লুৎফর রহমানের গান পরিবেশন করে ঢাকার সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করে ঢাকার বহ্নিশিখা, চাকমা ভাষার গণসঙ্গীত পরিবেশন করে রাঙ্গামাটির গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী, ভাষা আন্দোলনের গান পরিবেশন করে চট্টগ্রামের ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান পরিবেশন করে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর শিল্পীরা।

একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাতক্ষীরার শিল্পী রোজ বাবু, পাবনার প্রলয় চাকী, সিলেটের গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার ফকির শাহাবুদ্দীন, সুরাইয়া পারভীন ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সুজিত চক্রবর্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপকূলীয় অঞ্চলবাসীর জানমালের নিরাপত্তায় সব কিছু করা হবে
পরবর্তী নিবন্ধআধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে