দেবে গেছে সিইউএফএল জেটির একাংশ

অন্য অংশও নাজুক ।। চট্টগ্রাম থেকে সার পরিবহন হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা ।। বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী সার পরিবহন হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে সিইউএফএল জেটি ব্যবহার করে দেশের নানা অঞ্চলে লাখ লাখ টন সার পরিবহন করা হয়। কিন্তু এই জেটির এক পাশ দেবে যাওয়ার পাশাপাশি জেটিটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার আশংকা প্রকাশ করে বিকল্প পথ খোঁজার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে কাফকো থেকে সার পরিবহনে ট্রাকে সার কম বোঝাই করার ব্যাপারটিও সার পরিবহন খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিসিআইসি গতকাল উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে সার পরিবহনে গতিশীলতার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বহুজাতিক সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) উৎপাদিত সার দেশের নানা অঞ্চলে পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে কাফকো হতে বছরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন সার বিভিন্ন গুদামে স্থানান্তর করা হয়। বিসিআইসির নিয়োগকৃত পরিবহন ঠিকাদাররাই মূলত কাফকোর সার দেশের বিভিন্ন বাফার ও কারখানা গুদামে স্থানান্তর করে। যেখান থেকে পরবর্তীতে ডিলারের মাধ্যমে সার সরবরাহ দেয়া হয় প্রান্তিক পর্যায়ে। কাফকো হতে আন্তর্জাতিক বাজারদরে কেনা সারের একটি বড় অংশ নদীপথে পরিবাহিত হয়। এই সার কাফকো থেকে সিইউএফএল জেটিতে এনে ওখান থেকে লাইটারেজ জাহাজে বোঝাই করে পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ বিসিআইসিকে জানিয়েছে, যে জেটি থেকে কাফকোর সার পরিবাহিত হয় সেটির মালিকানা সিইউএফএলের। কিন্তু জেটিটির অবস্থা খুবই নাজুক। এই জেটির বড় একটি অংশ দেবে গেছে। এছাড়া জেটির অন্যান্য অংশের অবস্থাও একেবারে নাজুক। যে কোনো সময় এই জেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে লাইটারেজ জাহাজে সার বোঝাই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সিইউএফএল থেকে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কাফকো হতে সার উত্তোলন অব্যাহত রাখার জন্য সিইউএফএলের জেটির পরিবর্তে কাফকোর নিজস্ব জেটি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যাতে দেশব্যাপী সার পরিবহন ব্যাহত না হয় সেদিকে সজাগ থাকার জন্যও বিসিআইসি থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অপরদিকে কাফকো হতে কেনা সার পরিবহনে বিসিআইসিকে ট্রাক নিয়েও বড় ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। নদীপথের পানি কমে যাওয়া, লাইটারেজ জাহাজের সংকটসহ নানা কারণে নৌপথে সার পরিবহন ব্যাহত হয়। এক্ষেত্রে বিসিআইসির পরিবহন ঠিকাদারেরা ট্রাকে সার বোঝাই করে দেশের নানা অঞ্চলে পাঠিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কাফকো এক বিরাট সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে বলে মন্তব্য করে বিসিআইসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কাফকোর লোডিং পয়েন্টে একটি ট্রাকে ৮ টনের বেশি সার দেয়া হয় না। অথচ আন্তঃজেলা ট্রাকগুলো ১৫ থেকে ২০ টন সার পরিবহন করে। এক্ষেত্রে পরিবহন ঠিকাদারকে কাফকোর লোডিং পয়েন্টে একবার ট্রাকে ৮ টন সার বোঝাই করতে হয়। ওই সার নিয়ে গেটের বাইরে এসে আবারো অপেক্ষা করতে হয়। নিয়োগ করতে হয় শ্রমিক। গেটের বাইরে দুই ট্রাকের সার এক ট্রাকে বোঝাই করে গন্তব্যের পথ ধরতে হয়। এতে পরিবহন ঠিকাদারের বাড়তি অর্থ খরচের পাশাপাশি বিস্তর সময়ও নষ্ট হয়। পথিমধ্যে সারের বস্তা এক ট্রাক থেকে অন্য ট্রাকে স্থানান্তরের সময় হুক মেরে সার চুরি করার ঘটনাও ঘটে। কাফকোর লোডিং পয়েন্টে ১৫ থেকে ২০ টন সার বোঝাই করতে দেয়া হলে এই সংকটের সুরাহা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
গতকাল বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ ইমদাদুল হক জরুরি এক পত্র দিয়ে সিইউএফএলের পরিবর্তে কাফকোর জেটি ব্যবহার এবং লোডিং পয়েন্টে ১৫ থেকে ২০ টন সার বোঝাইয়ের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিইউএফএলের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গত রাতে আজাদীকে বলেন, আমাদের জেটির অবস্থা খুবই নাজুক। এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে দেশব্যাপী সার পরিবহনে সংকট তৈরি হবে। কাফকোর সার পরিবহনে তাদের জেটি ব্যবহার করলে এই সংকট থাকে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে কাফকোর শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিসিআইসির নিকট সার বিক্রি করে দিই। পরিবহনের ব্যাপারটি তাদের। এখন তারা কিভাবে সার পরিবহন করবে সেটি তাদের ব্যাপার। আমাদের জেটি ব্যবহারের বিষয়টি বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার কারাগারে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাবুলের আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধইভিএমের জন্য ইসির ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প