দারা পুত্র পরিবার- তুমি কার, কে তোমার?

শিউলী নাথ | শুক্রবার , ২৬ মে, ২০২৩ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

বলো না কাতর স্বরে,/ বৃথা জন্ম এ সংসারে/ এ জীবন নিশার স্বপন/ দারা পুত্র পরিবার, তুমি কার কে তোমার?/ বলে জীব করোনা ক্রন্দন ’; –কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘জীবন সংগীত’ কবিতা আমাদের জীবনের ধারনাকে মুহূর্তে বদলে দেয়। চাওয়াপাওয়ার হিসেব, না পাওয়ার বেদনা, এসব তুচ্ছ বিষয়গুলো তখন অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মনে হয়। অনেক সাধনায় পাওয়া অমূল্য এ মানবজীবন। এ জীবন হাসিকান্না, সুখদুঃখ, আনন্দবেদনা সব নিয়েই গড়ে উঠেছে। স্রষ্টা জীব বৈচিত্র্যের মধ্যে মানুষকে অত্যধিক জ্ঞানী, মেধাবী ও বৈচিত্র্যময় করে পাঠিয়েছেন। মানুষ একমাত্র প্রাণি যারা সংকটকালীন সময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারে, সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, মহান কীর্তি স্থাপন করতে পারে।

আলবার্ট আইনস্টাইনের মতে, ‘অপরের জন্য বেঁচে থাকা জীবনই সার্থক জীবন’। অপরের জন্য কিছু করতে পারা, দৃঢ়তার সঙ্গে সত্যের মুখোমুখি হতে পারা, আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসাএই হওয়া উচিত জীবনের ধর্ম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছেন, ‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে’?- এই চরম সত্যকে আঁকড়িয়ে ধরে আমাদের বাঁচতে হবে। ‘মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়’ ঠিক এভাবেই বাঁচতে হবে এবং স্মরণীয় হয়ে থাকতে হবে। কৃতকর্মই আমাদের অমরত্ব দান করতে পারে। মানুষ তার অর্থ, বৈভব, ধন, সম্পত্তি, আভিজাত্য নিয়ে ঠুনকো অহংকার করে। কিন্তু একবার চোখ বন্ধ হয়ে গেলে কোথায় থাকবে সে অহংবোধ, সে আভিজাত্য? যতই বলি মায়ার সংসার, কিন্তু তখন কেউ কারো খোঁজ খবরও রাখবে না। এমন কি যাদের মায়ায় আবদ্ধ হয়ে এই সংসার সমুদ্রে নেমেছি সেই পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে আপনজনও নয়। যার কাছ থেকে আমরা বেশি সহানুভূতি প্রত্যাশা করি, দেখা যায় সে মোটেও খবর নেয় না বরং অপ্রত্যাশিত ব্যক্তিই সে কাজ সমাধা করেন। ভাবি, আমি না থাকলে বোধহয় আমার জায়গাটা শূন্য পরে থাকবে। বাস্তবে কিন্তু অন্য কেউ সেই জায়গাটা দখল করে নেয়। এটাই সত্য। তবুও আমরা আবেগের বশে অনেক সময় দুঃখ প্রকাশ করি। সামর্থ্যবান খুব পরিচিত মুখগুলো যখন দুঃখের দিনে কুশলাদি জানতে আসে না, কেমন আছেন?- বলে একবারও জিজ্ঞেস করে না, খেয়ে পরে আছি কী না তাও খবর রাখে না, তখন আমরা অতি ভাবাবেগে ভাসি। আর ভাবি, আমাদের বুঝি আপন বলে কেউ নেই। এ প্রসঙ্গে স্বার্থপর মানুষের কথা বাদই দিলাম।

মানুষ জীবনভর মানুষকে মনে রাখবেএ ভাবনা বোকামি। শুধু ভাববো এই জীব বৈচিত্র্যে একবার যখন প্রবেশ করেছি, তখন এই সত্য মেনে নিতে হবে যে, আমি না থাকলেও আমার স্থান অন্য কেউ নিয়ে নেবে। আমি থাকবো না বলে প্রকৃতির কোনো কিছুই স্তব্ধ হয়ে থাকবে না, সব তার নিজ নিয়মেই চলবে। সেখানে মানুষ তো প্রকৃতিরই অংশ, তাই মানুষ অমন হতেই পারে। এটাই চিরসত্য। তাই অহংকার করা উচিত আচার, ব্যবহার, পরোপকার, ঔদার্য, পরহিতব্রত এসব নিয়ে। সময় থাকতেই আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু কীর্তি স্থাপন করা উচিত। কিছু কর্মে মনোনিবেশ করা উচিত যাতে করে পৃথিবীর মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারি। তুচ্ছ আবেগ, ভালোবাসার কোনো মূল্যই নেই এই পৃথিবীতে। তাইতো জীবনানন্দ দাশ বলেছেন,– ‘আমি চলে যাব বলে, চালতা ফুল কি আর ভিজিবেনা শিশিরের জলে? নরম গন্ধের ঢেউয়ে? লক্ষ্মী পেঁচা গান গাবে নাকি তার লক্ষ্মীটির তরে? সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে’!-এটাই জীবনের পরম সত্য ও চরম বাস্তবতা!

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিতা মাতাকে যোগ্য মর্যাদা দাও
পরবর্তী নিবন্ধমানবতার কল্যাণের জন্যই ইসলামের আগমন