দক্ষ জনবল তৈরিতে শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রয়োজন নিবিড় সংযোগ

শেখ বিবি কাউছার | বুধবার , ১২ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান পেক্ষাপটে শিল্প-কারখানা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ধরনের দক্ষ জনবল প্রয়োজন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তা তৈরি করতে পারছে না। যার কারণে চাকরিদাতারা বাধ্য হয়ে বহু বিদেশিকে এখানে নিয়োগ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় শিল্প-কারখানাগুলো কী ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন জনবল প্রত্যাশা করে, সেটার একটা ধারণা পেতে পারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। আমরা ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি, দিচ্ছি তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ। কিন্তু ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা ও উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের জন্য সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের একটা যোগাযোগ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে লাখ লাখ তরুণ চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে। আর বিদেশিরা দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছে। বেতন হিসেবে তারা বছরে পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা হয়তো দ্বিগুণ হতে পারে আর সত্যিই এমনটি ঘটলে চাকরির বাজারে শিক্ষিত বেকারের প্রবেশের সুযোগ বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। এর কারণ বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদেরকে কারিগরি ও প্রযুক্তিতে দক্ষ নাগরিক হিসেবে তৈরি করে দিতে পারছে। কিন্তু সেখানে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পারছে না। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে বাস্তবতার কোনো সংযোগ নেই। কর্পোরেট মালিকগণ প্রায় সময় বলছেন, তাদের দক্ষ লোক প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনমাফিক জনবল পাচ্ছেন না তারা। আমাদের শিল্পোদ্যোক্তারা অধিকাংশ সময় প্রযুক্তি উদ্ভাবন কিংবা তৈরিতে দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ক্রয়কেই যৌক্তিক মনে করেন। আমাদের দেশে এমনও অনেক তরুণ আছেন যাদের প্রযুক্তির উপর কোনো একাডেমিক পড়াশোনা নেই কিন্তু তারা নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অনেক তাক লাগানো জিনিস তৈরি করছেন। শুধুমাত্র সরকার এগিয়ে আসবে সে অপেক্ষা না করে শিল্পমালিকরা চাইলে সে তরুণদের মেধা ও শ্রমকেও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগাতে পারেন।
আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচুর শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। আমাদের এগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণের সুযোগ খুব কম। তাই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ এ কমপক্ষে একটি শিল্প কারখানা পর্যবেক্ষণের সুযোগ রাখা দরকার। এতে শিক্ষকরা শিল্প প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সাথে বিনিময় করার সুযোগ পাবেন। শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী দক্ষতা, গবেষণার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। আর দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরিতেও সহায়ক হবে। এতে শিক্ষাদান পদ্ধতি হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয় ও অনুসন্ধিৎসু। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাত্ত্বিক বা মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কম। তারাও চায় হাতে-কলমে শিখতে। শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করলে শিক্ষার্থীরাও হয়ে উঠবে জ্ঞানপিপাসু, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও আত্মনির্ভরশীল। তাই এখানে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাতে নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তা পরস্পরের মধ্যে একটি কার্যকর ও নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে তা দুই প্রতিষ্ঠানের জন্যই সফলতা নিয়ে আসতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবেগের বিলাপ
পরবর্তী নিবন্ধজীবনে সামনে এগিয়ে যেতে হলে দায়িত্ব নিতে হয়