তীব্র গরম, হাঁসফাঁস জীবন

তাপদাহ আরও দুদিন ।। সুস্থ থাকতে যা করতে হবে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে এসে তাপদাহ। দিনভর তাপদাহে অস্বস্তিকর অবস্থা। তীব্র গরমে নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তাপদাহ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে এক পশলা বৃষ্টিতে। কিন্তু দেখা নেই কাক্সিক্ষত বৃষ্টির। এছাড়া এখন রমজান মাস। এর মধ্যে তাপদাহের সাথে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। তাপমাত্রার বাড়ার সাথে সাথে নগরীর বেশিরভাগ অঞ্চলে দিনে একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তাপদাহ আরও দুদিন অব্যাহত থাকবে। গতকাল নগরীর কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, তাপদাহে ক্লান্ত মানুষ খুঁজছে ছায়া। আরোহী থাকা সত্ত্বেও রিকশা চালকরা যাত্রী তুলতে চাইছে না। আবার গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আজ (গতকাল) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি। এতদিন গড় তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুদিন একই ধরনের তাপমাত্রা থাকতে পারে।

নগরীর লালখান বাজার এলাকার দিনমজুর সৈয়দ মিয়া বলেন, গত কয়েকদিনের গরমের কারণে কাজ করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। কিছুক্ষণ কাজ করলে ক্লান্তি আসে। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে, ছায়া আছে এমন স্থানে রিকশা রেখে বিশ্রাম করছেন রিকশা চালকরা। তাদের একজন হালিশহর এলাকার সগির হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৬টার সময় রাস্তায় নেমে ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালানো যায়। এরপর গরমে রাস্তায় আর থাকা যায় না। বিকাল ৫টার পর আবার আসি। কিন্তু যে পরিমাণ কাজ করতে পারি তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়।

সুস্থ থাকতে যা করতে হবে : ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবু বকর সিদ্দিক আজাদীকে বলেন, তীব্র গরমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ বের হয়ে যায়। তাই ওর‌্যাল স্যালাইন ও ডাব খেতে হবে। অনেকে বাইরের রোদ থেকে বাসায় গিয়ে ফ্রিজের পানি পান করে কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করে। এটি কখনোই করা যাবে না। বাসায় পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল কিংবা পানি পান করতে হবে। না হলে মাথাব্যথা, সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গরমের সাথে মানানসই কাপড়-চোপড় পরতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হতে হবে। এসব নিয়ম-কানুন মেনে চললে গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব। এছাড়া একটি কথা মনে রাখতে হবে, এই গরমের বাইরের আখের রস কিংবা লেবুর শরবত টাইপের পানীয় পান করা যাবে না। কারণ এই গরমে আমরা প্রচুর ডায়রিয়ার রোগী পাচ্ছি।

বিবিসি বাংলা জানায়, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেড ক্রস ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০২১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে, যার ফলাফলে দেখা গেছে ঢাকায় তাপপ্রবাহের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। তাপপ্রবাহের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বয়ষ্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সাথে জড়িত তাপপ্রবাহের সময় তারা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। সরাসরি সূর্যের নিচে যাদের কাজ করতে হয় তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই তাপপ্রবাহের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে : ১. বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সময় যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে সেই সময়টাতে বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। ২. ঘরের ভেতরে বা ছায়া আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করতে হবে। ৩. প্রচুর পানি এবং তরল পানীয় যেমন শরবত, ডাব, ফলের রস পান করতে হবে। ৪. যতবার সম্ভব গোসল করুন। ৫. বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিন। ৬. যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে। ৭. ঢিলেঢালা ও বাতাস পরিবহনকারী পোশাক পরুন। ৮. ঘরের বাইরে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোটরসাইকেলে লরির ধাক্কা, কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপানছড়িতে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা