তিন খালে বাঁধের মাটি তুলেনি চসিক

এবার অভিযোগ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার আসন্ন বর্ষায় ‘জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ’ বৃদ্ধির শঙ্কা যদি মাটি থেকে থাকে তা পরিষ্কার করা হবে : মেয়র

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৩০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

বৃষ্টির মৌসুম ঘনিয়ে এলেও নগরের বিভিন্ন খালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে দেয়া অস্থায়ী বাঁধ নিয়ে আলোচনা জোরালো হয়। সমালোচনা করা হয় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সমালোচনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) দায়িত্বশীলরা। তারা প্রায় সময় দ্রুত বাঁধ অপসারণ এবং খাল থেকে মাটি উত্তোলনের দাবি জানান। গত বছর বাঁধ অপসারণের অনুরোধ করে সিডিএকে চিঠিও দেয় চসিক। তবে এবার চসিকের বিরুদ্ধেই নগরের পৃথক তিনটি খালে দেয়া বাঁধের মাটি অপসারণ না করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এসব মাটি অপসারণ করার জন্য চলতি মাসের শুরুতে সিটি মেয়র বরাবর চিঠি দিয়েছেন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী। ২১ দিন পার হলেও খালগুলো থেকে মাটি অপসারণের উদ্যোগ নেয়নি চসিক।

খাল তিনটি হচ্ছেশীতলঝর্ণা খাল, বামুনশাহী খাল ও গয়নাছড়া খাল। এসব খালে বাঁধ দিয়ে রিটেইনিং ওয়াল ও ব্রিজ নির্মাণ করে চসিক। কয়েক মাস আগে কাজ শেষ হলেও বাঁধ ও রিটেইনিং ওয়ালের বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি অপসারণ করেনি চসিক। এতে ‘জলাবদ্ধতা’ সৃষ্টির পাশাপাশি ‘জনভোগান্তি’ বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে খালে বাঁধ দেয়া হলে তার সমালোচনা করা হয়। যদিও বাঁধগুলো আমরা খুলে দিই এবং যখন বাঁধ থাকে তখন পাইপ দিয়ে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করি। অথচ সিটি কর্পোরেশন তিনটি খালে যে বাঁধ দিয়েছে তার মাটি তুলেনি। আমরা তাদের ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বলেছিলাম, ঠিকাদার বলেছে কাজ শেষ হলে তুলে ফেলবে। কিন্তু তুলেনি। পরবর্তীতে আমি কর্পোরেশনেও চিঠি দিয়েছি। এখনো মাটিগুলো অপসারণ করেনি। সেখানে ঘাস জমে গেছে। এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, যদি মাটি থেকে থাকে তা পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু গয়নাছড়া ও শীতলঝর্ণার জন্য খুব বেশি জলাবদ্ধতা হয় না। শহরের প্রধান খাল যেমন চাক্তাই খাল, চশমা খাল, বির্জা খাল, মহেশ খাল, ডোমখালী খাল পরিষ্কার থাকলে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে। সেখানে তো বাঁধ আছে। খালের পানি কর্ণফুলীতে যেতে বাঁধের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব খালে আমাদের কাজের কারণে মাটি রয়ে গেছে বলা হচ্ছে তা আমরা পরিষ্কার করে দিব। তবুও তারা যেন অন্যান্য খাল থেকে বাঁধ অপসারণ করে পরিষ্কার করে দেয় সে আহবান থাকবে।

চিঠির পরও সাড়া নেই : গত ৮ মার্চ সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বরাবর পৃথক দুটি চিঠি দেন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী। দুটো চিঠিতেই খালের ভেতরে মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া ও বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি এবং ব্রিজের নিচে রেখে দেয়া মাটি অপসারণ করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চসিকের প্রতি অনুরোধ করা হয়।

এর মধ্যে শীতলঝর্ণা ও বামুনশাহী খাল সম্পর্কে বলা হয়, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের শীতলঝর্ণা খালের হাজীপাড়া ব্রিজ থেকে আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত ৩২০ মিটার এবং বামুনশাহী খালের অনন্যা আবাসিক এলাকা হতে হাজীরপুল পর্যন্ত ৩০০ মিটারে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খালের উভয় পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মিত হয়েছে। খালগুলোতে কাজ করার সময় খালের ভিতরে মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া ও বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি রাখা হয়েছে। এসব মাটি অপসারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রতিনিধি মৌখিকভাবে বার বার বললে চসিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ হওয়ার পর অপসারণ করবে বলে জানায়। তবে কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া ও বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি অপসারণ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বে এ মাটি অপসারণ না করা হলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এবং জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি : গয়নাছড়া খাল প্রসঙ্গে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, পাহাড়তলী শহীদ লেইন পুলিশ বিট ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে চসিকের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২৯০ মিটার ইট দ্বারা রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকালে খালের ভিতরে মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়া ও বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি রাখা হয়েছে। মৌখিকভাবে বলা হলে ওসব মাটি কাজ শেষে অপসরাণ করা হবে বলে জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত বেইস করার সময় উত্তোলনকৃত মাটি খালের ভেতর রাখা হয়েছে যা অপসারণ করেনি। বেসামরিক লোকজন সেখানে সবজি বাগান করে। চসিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

একই চিঠিতে বলা হয়, গয়নাছড়া খালে চসিকের নির্মিত রিটেইনিং ওয়ালের ডাউনে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও ব্রিজের নিচে খালের মধ্যে রাখা মাটি নিয়োজিত ঠিকাদার অপসারণ করেনি। ফলে ব্রিজের নিচ দিয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগভীর রাতে পাহাড় কাটার সময় ধস, তিন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআ’লীগের নোমানসহ ৩ জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ