ডেঙ্গুর হানা থেমে নেই

চলতি মৌসুমে আড়াই শতাধিক রোগী শনাক্ত চট্টগ্রামে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮ জন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুর হানা থেমে নেই চট্টগ্রামেও। চলতি বছর (এ পর্যন্ত) আড়াই শতাধিক (২৫৮ জন) রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে শুধু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫৯ জন রোগী। আর চমেক হাসপাতালের বাইরে মহানগর ও জেলার অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শনাক্ত হয়েছে ৯৯ জন। সবমিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ২৫৮ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চমেক হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে চমেক হাসপাতাল বাদ দিয়ে মহানগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে থাকে সিভিল সার্জন কার্যালয়। আর চমেক হাসপাতালের তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী- চলতি বছর জুলাই মাসে ৭ জন, আগস্ট মাসে ৩৯ জন, সেপ্টেম্বরে ২৬ জন এবং সর্বশেষ অক্টোবরে ২৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। আর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মাঝে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এ পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস আজাদীকে বলেন, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। এর বাইরে কোন মৃত্যুর তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। এছাড়া শনাক্তদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। হাতে গোনা কয়েকজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলেও জানান এন্তেজার ফেরদৌস।
এদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৫৯ জন চিকিৎসা নিয়েছে চমেক হাসপাতালে। তবে আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ১৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপের শঙ্কা থাকেই। যার কারণে আমরা প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি। আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রস্তুতি হিসেবে কয়েক মাস আগেই মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পাওয়া যাচ্ছে না ডেঙ্গুর সঠিক চিত্র :
করোনা অতিমারির কারণে গত বছরের ন্যায় এবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত ও শনাক্তের সঠিক চিত্র আসছে না বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেলে মহানগর ও উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ডেঙ্গু শনাক্তের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়মিত হালনাগাদ রিপোর্ট সরবরাহ করতো স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে ডেঙ্গু শনাক্তের তথ্য প্রতিনিয়ত পাওয়া যেতো।
কিন্তু গতবছর থেকে করোনা সংক্রমণের কারণে অন্যান্য সব কার্যক্রমই অনেকটা ঢিমেতালে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে ব্যস্ত। এতে হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতাল ডেঙ্গু সংক্রান্ত হালনাগাদ রিপোর্ট দিলেও বেশিরভাগ হাসপাতাল নিয়মিত রিপোর্টিং করছে না। ফলে ডেঙ্গু শনাক্তের বিষয়ে সঠিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না চট্টগ্রামে।
করোনাকালে অধিকাংশ হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে আগেই জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নুরুল হায়দার ও জেলা কীট তত্ত্ববিদ এন্তেজার ফেরদৌস।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে- ২০১৯ সালে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় (চমেক হাসপাতালের তথ্যসহ) ২ হাজার ৫৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় অন্তত ৭ জনের। চমেক হাসপাতালের তথ্য ছাড়া ২০২০ সালে ১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। সঠিক ভাবে রিপোর্টিং না হওয়ায় গতবছর ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত চিত্র আসেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রিপোর্টিং ও মনিটরিংয়ের দুর্বলতার কারণে গত বছরের ন্যায় এবছরও ডেঙ্গুর প্রকোপের প্রকৃত চিত্র পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ ঘণ্টা পর নাগরিক সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধমেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চায় চসিক