মেট্রোরেল চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চায় চসিক

প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডির ওপর মতামত দিতে বলেছে মন্ত্রণালয়

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

নগরে মেট্রোরেল (এমআরটি) অথবা মনোরেল সার্ভিস চালুর বিষয়ে ইতোপূর্বে সম্পন্নকৃত প্রি-ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি (প্রাক সম্ভাবতা যাচাই) এর ওপর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) মতামত পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কনসাল্টেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ এর সাথে সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই) সম্পাদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চেয়েছিল চসিক। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় আগে সম্পন্নকৃত ‘প্রি-ফিজিবিলিটি’ স্টাডির ওপর চসিককে মতামত পাঠাতে বলে। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। তাই প্রস্তাবনার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এসেছে কীনা অবগত নই। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেন নি।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি বিষয়ে ২০১৯ সালে ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ দিয়ে প্রি-ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করেছিল চসিক। একই বছরের জুলাই মাসে চসিকের কাছে হস্তান্তরকৃত প্রতিবেদনে কনসাল্টেন্ট প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নগরে ৫৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রুটে পৃথক তিনটি এমআরটি সার্ভিস চালু করা সম্ভব। এ মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং গড় গতি ৪৫ কিলোমিটার। চালু হলে একটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি’র মাধ্যমে ঘণ্টায় দুই প্রান্তে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে (সম্ভাব্য) এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড কনসালটেন্ট লিমিটেড’ এর প্রতিবেদনে তিনটি রুটের কথা প্রস্তাব করে। এর মধ্যে কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরউজ্জামান স্কোয়ার পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং অঙিজেন থেকে একে খান বাস স্টপ পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে তিনটি এমআরটি লাইনে ৪৭টি স্টেশন করার প্রস্তাব আছে।
প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে এমআরটি চালুর ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার বিষয়ও উঠে আসে। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা আছে শুধু এমআরটি লাইন-১ তথা কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত অংশে। এখানে বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার সড়কে ইতোমধ্যে নির্মিত ফ্লাইওভার এবং লালখান বাজার হতে বিমানবন্দর সড়কে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারকেই এ প্রতিবন্ধক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনা হচ্ছে- বহদ্দারহাট থেকে লালখান বাজার অংশে বিকল্প পথে এমআরটি চালু করা। এ পথ হচ্ছে- বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি ও লালখান বাজার।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে চসিকের মতামত চেয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছিল চসিক। ওই বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাই স্পীড ট্রেন চালুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। ওই হাই স্পিড ট্রেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরীকেও যুক্ত করার আলোচনা চলে তখন। এ বিষয়ে একই বছরের ২০ জানুয়ারি চীনের প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন’ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবও দেয়।
অবশ্য, ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নগরীতে মেট্রোরেল চালু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল চীনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিটি কর্পোরেশন ও ‘সিনোহাইড্রো ব্যুরো এন্ড কো. লি.’ নামে চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে একটি মতবিনিময় সভাও হয়েছিল। মূলত, ওই সভায় সিনোহাইড্রো ব্যুরো এন্ড কো. লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজার হোয়াং জিং চট্টগ্রাম শহরে মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। তবে পরবর্তীতে এ কার্যক্রমের তেমন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুর হানা থেমে নেই
পরবর্তী নিবন্ধমহানগরে ৫ স্কুলের ৬ ভেন্যুতে টিকাদান কেন্দ্র করার প্রস্তাবনা