ঝুলে গেছে কাস্টমসের নিলাম

পাঁচদিন পরও আসেনি ঢাকার দরপত্র

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম কাস্টমসে নির্ধারিত সময়ের পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো আসেনি ঢাকায় জমা হওয়া নিলামের দরপত্র। ফলে ফেব্রিক্স-সিএনজি অটোরিকশাসহ ৬৩ লট পণ্যের নিলাম প্রক্রিয়া কার্যত ঝুলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ঢাকায় জমা হওয়া নিলামের দরপত্রগুলো সেখানে খোলা হতো। পরবর্তীতে কাস্টমস হাউসের নিলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) সর্বোচ্চ দরদাতার নাম ঘোষণা করা হতো। কিন্তু গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিলামে ঢাকায় জমা হওয়া একটি দরপত্রে জালিয়াতির অভিযোগে সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি। মূলত বিডাররদের আপত্তির মুখেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঢাকায় জমা হওয়া দরপত্রগুলোসহ একসাথে চট্টগ্রামে দরপত্রের বঙ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখনো দরপত্রগুলো কাস্টমসে না পৌঁছায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিডাররা।
কয়েকজন বিডার জানান, মংলা কাস্টমসের পণ্যের নিলামের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসে দরপত্রের বঙ স্থাপন করা হয়। বঙে জমা হওয়া সে দরপত্রগুলো মংলা কাস্টমসের নিলাম পরিচালনাকারীর প্রতিষ্ঠানের বাহকের মাধ্যমে মংলায় পাঠানো হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমসের ক্ষেত্রে এটি করা হয় না। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কেএম কর্পোরেশনের ঢাকায় প্রতিনিধি থাকার সত্ত্বেও চারদিন পর অর্থাৎ গত সোমবার ঢাকা থেকে নিলামের দরপত্রগুলো ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো যখন আসবে তখন হয়তো চট্টগ্রামের দরপত্রগুলোর সাথে খোলা হবে। কিন্তু সাধারণ বিডাররা তো বিষয়টা নিয়ে ঝামেলায় পড়ে গেলো। এখানে সব বিডারের পে অর্ডার আটকে গেছে। সব মিলিয়ে ৭-১০ দিনের একটা জট লেগে গেলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঢাকা থেকে ২৮ অক্টোবরের নিলামের দরপত্রগুলো আনার বিষয়ে আমরা নিলামের উপ-কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। এক্ষেত্রে একটা গাফিলতি হয়েছে। দরপত্রগুলো যদি বৃহস্পতিবার সিল করে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তাহলে রোববার নিলাম অনুষ্ঠান করা যেতো। কিন্তু ঢাকা থেকে রোববার দরপত্রগুলো সিল করে চট্টগ্রামে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে গত সোমবার। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. আলী রেজা হায়দার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঢাকা থেকে দরপত্রগুলো ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে। প্রথমবার বলে এটি হয়েছে। পরবর্তীতে একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে হাতে হাতে ঢাকার দরপত্রগুলো নিয়ে আসবো।
উল্লেখ্য, গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিলামে (টেন্ডার সেল-১৮/২১) এর ১১০ নম্বর ক্যাটালগে সর্বোচ্চ এক কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিড করেন খোরশেদ আলম নামের একজন বিডার। কাস্টমসের সরকারি নিলাম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান কে এম কর্পোরেশন তার নাম ঘোষণা করে। কিন্তু পরবর্তীতে সর্বোচ্চ তালিকায় দেখা যায়, সাজ্জাদ হোসেন নামের অপর বিডারের নাম। অথচ তিনি বিড করেছিলেন ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতারা কাস্টমস কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেন। অভিযোগে তারা বলেন, ঢাকার সর্বোচ্চ দরদাতা খোরশেদ আলম চট্টগ্রামের দরদাতার সাজ্জাদ হোসেনের দরের সাথে বেশি পার্থক্য থাকায় নিলামকারী প্রতিষ্ঠান অথবা নিলাম শাখার কোনো ব্যক্তির যোগাসাজশে এ কাজটি করা হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, ১১০ নম্বর ক্যাটালগে খোরশেদ আলমের দরপত্রটি বৈধ ধরে তাকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। এখন তিনি যদি পণ্য না নেন তবে তার পে অর্ডার বাজেয়াপ্ত করা হবে।
নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর ফেব্রিঙ-সিএনজি অটোরিকশাসহ ৬৩ লট পণ্যের নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বাকি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-এসিড, টেঙটাইল, কেমিক্যাল, ড্রাগন ফল, হ্যাংগার, জিংক অঙাইড, সেলফ অ্যাডহেসিভ টেপ, পেপার ট্যাগ, ল্যাবরেটরি পণ্য, কটন হ্যান্ড কভার, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, কটন ড্রকর্ড, পুস্তক, স্ট্যান্ড ও ওয়াল ফ্যান, জুস, স্যানিটাইজার, ফোর হুইলার ইলেকট্রিক যানবাহন, বাচ্চাদের সাইকেল, মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, থান কাপড়, ফুটওয়্যার, টাইলস, ইলেকট্রিক মেশিনারি, কিউমিন সিড, ক্যাপিটাল মেশিনারি, লুব্রিকেটিং অয়েল, পিপি আইলেট ও পিভিসি ব্যানার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাংকে চুরি করতে ব্যর্থ হয়ে নথিপত্রে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধমোমের আলোয় মৃত স্বজনকে স্মরণ