জ্বালানি তেল সঙ্কটের শঙ্কানাকচ করল বিপিসি

চলতি মাসে দেশে আসছে আরো এক লাখ টন আয়-ব্যয়ের খতিয়ান তুলে ধরলেন বিপিসি চেয়ারম্যান

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেলের সঙ্কটের আশংকা নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে দেশে বর্তমানে ৩০ দিনের ডিজেল মজুদ রয়েছে। ১৮ থেকে ১৯ দিনের অকটেন, ১৮ দিনের পেট্রোল এবং ৩২ দিনের জেট ফুয়েলের মজুদও রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই আরো এক লাখ টন জ্বালানি তেল দেশে পৌঁছাচ্ছে। বর্তমান মজুদের সাথে নতুন তেল যুক্ত হয়ে দেশের জ্বালানি তেল সরবরাহ নেটওয়ার্ক সচল রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে প্রতি লিটার অকটেনে ২৫ টাকা লাভ হচ্ছে বলে স্বীকার করে বলা হয়েছে কৌশলগত কারণেই পেট্রোল এবং অকটেনের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে ডিজেলে এখনো লিটার প্রতি ৬ টাকার মতো লোকসান গুণতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত তথ্য জানিয়েছেন। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামস্থ বিপিসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এবিএম আজাদ আরো বলেন, আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতি লিটার ডিজেলে ১২০ টাকা খরচ হচ্ছে বিপিসির। এ ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি ৬ টাকার মতো লোকসান দিতে হচ্ছে। তবে অকটেনে ২৫ টাকার মতো লাভ হচ্ছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। ক্রুডের ওপর পেট্রোল ও অকটেনের দাম নির্ভর করে। পেট্রোল ও অকটেনের দাম কৌশলগত কারণে বাড়াতে হয়েছে। বিগত অর্থ বছরগুলোতে বিপিসি লাভ করলেও কেন কয়েক মাসের লোকসানের মুখে দাম বাড়ানো হল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত জ্বালানি খাতে ক্রমাগত লোকসান গুণতে হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৫৩ হাজার ৫ কোটি টাকার মতো। এ খাতে ভর্তুকির বিনিময়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে ৪৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকার মতো বিপিসিকে প্রদান করে। ওই সময়ে আরও প্রায় ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল, যা পরে বিপিসির মুনাফার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত সেটি বহাল আছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৯৫ ডলারে কিনতে হতো। এতে প্রতি লিটার ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮৩ টাকা ৬ পয়সা। ওই সময়ে বিপিসি বিক্রয় করতো ৮০ টাকা করে। সেখানে লিটারে ৩ টাকার মতো লোকসান ছিল।
তিনি বলেন, আবার ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজার যখন প্রতি ব্যারেল ১০৮ ডলার ৫৫ সেন্ট, সেটাকে টাকায় প্রতি লিটারে কনভার্ট করলে হয় ৮৯ টাকা ৮৫ পয়সা। তখনও বিপিসি বিক্রি করেছে ৮০ টাকা লিটার। যে কারণে ওই মাসে ৯ টাকার মতো লোকসান গুণতে হয়েছে। এ ফর্মুলায় গত জুলাই মাসে প্রতি ব্যারেল মূল্য ছিল ১৩৯ দশমিক ৪৩ ডলার, টাকায় কনভার্ট করলে প্রতি লিটারের খরচ পড়ত ১২২ টাকা ১৩ পয়সা। তখনও ওই তেল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। এভাবে তেলের দাম বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে প্রতি লিটারে লোকসান দাঁড়িয়েছিল ৪২ টাকা ১৩ পয়সা। তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসির প্রকৃত লোকসান ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা।
বিপিসির নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য উপস্থাপন করে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ১১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলোর পেছনে খরচ হবে প্রায় ৩৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ইস্টার্ন রিফাইনারির দুই নম্বর ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে বিপিসির মুনাফার একটি অংশ এফডিআর করা হয়। বিপিসির অর্থ কোনো না কোনো ব্যাংকের হিসাবের বিপরীতে রাখতে হয়। প্রকল্পের যে অর্থ, সেগুলো প্রকল্পের নামে এফডিআর খুলে রাখা হয়। সরকারের কাছ থেকে কোনো ভর্তুকি না নিয়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা টাকা থেকে গত ৬ মাসের জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে বলেও বিপিসি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া জানান, এক লাখ টন জ্বালানি তেল পাইপ লাইনে রয়েছে। এরপরের প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এই মজুদ ফুরোনোর আগেই নতুন জ্বালানি তেল দেশে পৌঁছাবে। জ্বালানি তেল নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠার কোনো কারণ নেই বলেও তিনিও উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র আশুরা পালিত
পরবর্তী নিবন্ধফুটপাতে ওয়াসার পাম্প হাউজ!