জীবন বলী আবার জিত্যে

দুই বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ২৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

মধুর প্রতিশোধ নিলেন চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন। ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন জীবন দুই বছর আগে যে মঞ্চে শিরোপা হারিয়েছিলেন, দুই বছর পর আবার সেই মঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পুনরুদ্ধার করলেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯ সালে যে শাহজালালের কাছে হেরেছিলেন তিনি, সেই শাহজালালকে হারিয়ে আবারো জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন হলেন জীবন।

গতকালের এই লড়াই ছিল ভীষণ কঠিন। কারণ তিন দফায় প্রায় ৩০ মিনিট লড়াই করেও জীবন এবং শাহজালাল কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। পরে রেফারিদের সিদ্ধান্তে চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে শুরু হয় শাহজালাল এবং জীবনের ফাইনাল খেলা। ১৮ মিনিট চলার পর রেফারিরা পয়েন্ট পাওয়ার কথা বলে জীবনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। কিন্তু সেটা মানতে পারেননি শাহজালাল এবং মাঠে উপস্থিত দর্শকরা।

পরে প্রতিযোগিতার প্রধান অতিথি সিটি মেয়র আরো তিন মিনিটের জন্য ম্যাচের সময় বাড়িয়ে দেন। সে তিন মিনিটে কেউ কাউকে হারাতে পারেননি। ফলে রেফারিরা পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কথা বলে জীবন বলীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তখনো অবশ্য সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি শাহজালাল বলী। আর কোন পয়েন্টের ভিত্তিতে জীবন বলীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে তারও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি রেফারিদের পক্ষ থেকে। তারপরও তাদের সিদ্ধান্তে বিজয়ী জীবন বলী।

বিজয়ী ঘোষণার পর দুহাত উচিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্বারের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করলেন জীবন। তার চোখে-মুখে আন্দের মাত্রা ছিল একটু বেশিই। কারণ ২০১৮ সালের পর আবারো জব্বারের বলী খেলার চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি।

চ্যাম্পিয়ন ট্রফি গ্রহণের পর জীবন বললেন, তিনি এবারে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এসেছিলেন। সেজন্য নিজেকে প্রস্তুতও করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার আশা পূরণ হওয়ায় দারুণ খুশি তিনি। অপরদিকে না হেরেও হারের স্বাদ নিতে হওয়ায় বেশ ক্ষুদ্ধ কুমিল্লার শাহজালাল। তবে তার কণ্ঠে আগামী আসরে শিরোপা জয়ে দৃঢ় প্রত্যয়। এভাবে শিরোপার মুকুট হারানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। যদিও ২০১৯ সালে তিনিও সেভাবেই জিতেছিলেন। তার আগে ২০১৮ সালে জীবন বলী চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শাহজালালকে হারিয়ে। সেবারও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করায় শাহজালালকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আর জীবনকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল। বলতে গেলে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির হাতবদল হয়েছে গত তিন আসর ধরে একই পন্থায়।

করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর নানা নাটকীয়তা পেরিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে জব্বারের বলী খেলার ১১৩ তম আসর। তবে দুই বছরের বন্ধ্যাত্বের একটা প্রভাব দেখা গেছে বলীদের অংশ গ্রহণে। ২০১৯ সালে সবশেষ আসরে যেখানে ১১৩ জন বলী অংশ নিয়েছিল গতকাল সেখানে অংশ নিয়েছে ৭৪ জন বলী। যেখানে প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী ২৪ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য ৮ জন বলীকে নির্ধারিত করে রাখা হয়। যেখানে ছিলেন গত আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার শাহজালাল এবং রানার্স আপ চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন ছাড়াও রাঙ্গামাটির রুবেল, বোয়ালখালীর কাঞ্চন, বাঁশখালীর আবদুল মবিন, খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা, বাবুধন চাকমা এবং তপন চাকমা।

প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শহজালাল পরাজিত করেন বাবুধন চাকমাকে, দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে জীবন পরাজিত করেন তপন চাকমাকে, তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে সৃজন চাকমা পরাজিত করেন রুবেলকে এবং শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে আবদুল মবিন পরাজিত করেন তসলিমকে। এরপর প্রথম সেমিফাইনালে তারেকুল ইসলাম জীবন বাঁশখালীর আবদুল মবিনকে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেন। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সৃজন চাকমাকে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেন শাহজালাল। অবশ্য শাহজালালকে বেশ ভালই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন সৃজন চাকমা। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ লড়াই করার পর দুর্বল হয়ে পড়ায় নিজেকে সরিয়ে নেন সৃজন চাকমা। পরে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও অংশ নেননি সৃজন চাকমা। ফলে আবদুল মবিনকে তৃতীয় এবং সৃজন চাকমাকে চতুর্থ স্থানের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

একদিকে রমজান আর অন্য দিকে দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হলো জব্বারের বলী খেলার এবারের আসর। তাই হয়তো দর্শকদের মাঝে আকর্ষণের কমতি ছিল না। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে বলী খেলা দেখতে হাজির হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক দর্শক। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হলো আরো একবার। কারণ আগের দুবারের মত এবারের ফাইনালটাও যে একেবারে ম্যাড়ম্যাড়ে এবং নিষ্প্রাণ ছিল। তারপরও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত খানিক আনন্দ নিয়ে ফিরেছেন দর্শকরা। যেখানে সবচাইতে বেশি আনন্দ চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনের। কারণ সেরার মুকুট যে তার মাথায় ওঠেছে।

খেলা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এর আগে বেলুন উড়িয়ে খেলার উদ্বোধন করেন পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীর। এ সময় বলী খেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল, সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, রুমকী সেন গুপ্তাসহ বলী খেলা ও মেলা কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধনিরাপদ যাতায়াতের দাবিতে ব্যতিক্রমী মানববন্ধন