জানুয়ারি মাসে গড়ে প্রতিদিন সড়কে দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তারা জানিয়েছে, এই এক মাসে দেশে ৫৯৩টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫৮৫ জনের। দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি হয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কে। আর গত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে বের হওয়া যায়নি এবারও। এই মাসে দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশই মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট। আর মৃত্যুর এক–তৃতীয়াংশের বেশি ছিল বাইক আরোহী।
গতকাল এক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরেছে বেসরকারি এ সংস্থাটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল। এতে জানানো হয়, গত মাসে সড়কে ৫৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ দিনে মৃত্যু গড়ে ১৯ দশমিক ৫ জনের। এর মধ্যে ২০৫ জন মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। অর্থাৎ যত মানুষ মারা গেছে, তাদের ৩৫ শতাংশ বাইক আরোহী। খবর বিডিনিউজের।
এই এক মাসে সড়কে আহত হয়েছেন ৮৯৯ জন। এদের মধ্যে ১১৪ জন ছিলেন বাইক আরোহী। অর্থাৎ বাইক দুর্ঘটনায় পতিতদের হার অন্য দুর্ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি। জানুয়ারিতে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩ দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু ও একজন আহত এবং ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। অর্থাৎ সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৬৫০টি দুর্ঘটনায় ৬৪২ জনের মৃত্যু ও ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১৫৩ জন চালক, ৮৪ জন পথচারী, ৮০ জন নারী, ৪৬টি শিশু, ৪৬ জন শিক্ষার্থী, ২৬ পরিবহন শ্রমিক। নয় জন আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সমান সংখ্যক শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আটজন, দুজন করে প্রকৌশলী ও আইনজীবী এবং একজন সাংবাদিক মারা গেছেন এই মাসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়লেও প্রাণহানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই এক মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় গত ১১ জানুয়ারি; সেদিন মারা যায় ৩০ জন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় ১৭ জানুয়ারি, ৩৫টি। সেদিন মৃত্যু হয় ২০ জনের।
বাইকের পর পণ্যবাহী গাড়ি : মোটরসাইকেলের পর সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যান ও লরির মতো পণ্যবাহী বাহন। দুর্ঘটনাগুলোর ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রিকশা–ইজিবাইক, ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বাস, ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ নছিমন–করিমন–মাহিন্দ্রা–ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ অটোরিকশা এবং ৫ দশমিক ০২ শতাংশ প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস সংশ্লিষ্ট।
দুর্ঘটনাগুলো কোথায় হয়েছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এক্ষেত্রে সবার আগে আঞ্চলিক মহাসড়ক, মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশই হয়েছে এসব সড়কে। দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে এবং ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ হয়েছে ফিডার রোডে। ঢাকা মহানগরেও দুর্ঘটনার হার কম নয়। মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ২২ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে রাজধানীতে। চট্টগ্রাম মহানগরে সেটি ১ দশমিক ১৮ শতাংশ আর ১ দশমিক ০১ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে রেলক্রসিংয়ে।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, জানুয়ারিতে ৫১ দশমিক ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে পথচারী গাড়ি চাপা পড়েছেন। ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বিবিধ কারণে, ১ দশমিক ০১ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রেনের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কা এবং শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে যাওয়া।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ফিটনেসহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, ছোট যানবাহনের পরিমাণ বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাট–বাজার ইত্যাদি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।