চকরিয়ায় ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা

সেচের পানি চড়া মূল্যে কিনতে কৃষকদের বাধ্য করার অভিযোগ ।। রেলসেতুর পিলারের গোড়ার মাটি কেটে নেয়া হয়েছে পানির লাইন

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বোরো মৌসুমে ধানসহ রকমারী ফসল উৎপাদনের জন্য মাঠে মাঠে তোড়জোড় চলছে প্রান্তিক কৃষকদের। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে সাত হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধানের চারা রোপণও করা হয়েছে। বাকী জমিতেও চলছে চারা রোপণের প্রক্রিয়া। তবে সাহারবিল ইউনিয়নের ৪০ হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারলেও মিঠা পানি পাওয়া নিয়ে সেচ সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকেরা। সংঘবদ্ধ একটি প্রভাবশালী চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। সেই চক্রটি মোটা অংকের টাকার বিপরীতে রামপুরের কৃষকদের পানি নিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি নির্মাণাধীন রেললাইন সেতুর নিচে পিলারের পাশ থেকে মাটি কেটে সেই স্থান দিয়ে পৌরসভা এলাকা থেকে সাহারবিলের রামপুরে পানির লাইন নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টাও করা হয়েছে। যার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে রেলসেতুর পিলারের গোড়াও। এই ঘটনায় পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাটি কাটায় জড়িতদের বারণ করলেও তা কোনো কাজেই আসেনি বলে ভুক্তভোগী বৈধ স্কিম পরিচালক মোহাম্মদ জাবের এবং সেই স্কিম থেকে সুলভ মূল্যে পানি পাওয়া প্রান্তিক কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন।

রামপুরের প্রান্তিক কৃষক রুহুল কাদের দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমার দুই কানি ধানী জমি রয়েছে। প্রতিবছর সেই জমিতে চাষাবাদ করে আসছি জাবেরের স্কিম থেকে পানি নিয়ে। এজন্য খুব অল্প টাকায় মিঠাপানির সুবিধার পাশাপাশি ট্রাক্টর দিয়ে জমিকে চাষ উপযোগী করতে পারি। কিন্তু আমি সহ সাহারবিলের রামপুরের শতাধিক কৃষককে জিম্মি করে রেখেছেন পৌরসভার কাহারিয়াঘোনার স্কিম পরিচালক ফরিদুল ইসলাম সহ সংঘবদ্ধ একদল প্রভাবশালী। তাদের কাছ থেকে বেশি টাকায় পানি নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা তাদের কথা শুনবে না তাদেরকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।’

কৃষক রুহুল কাদের বলেন, ‘বেশি টাকায় পানি নিতে বাধ্য করা হলে কৃষকেরা পথে বসবেন। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই এবং আমাদের জন্য নির্ধারিত জাবেরের স্কিম থেকে সুলভ মূল্যে পানি নিয়ে জমিতে চাষাবাদ করতে চাই।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর মৌজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে সেচ সমস্যা নিশ্চিত করতে উপজেলা সেচ কমিটি অনুমোদনে সেখানে বৈধভাবে স্কিম পরিচালনার দায়িত্ব পান চকরিয়া পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের করাইয়াঘোনার বাদশা মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ জাবের। তার স্কিম থেকে শতাধিক কৃষক একেবারে কম দামে সেচ সুবিধা গ্রহণ করে তাদের জমিতে ধানসহ ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু ফরিদুল ইসলাম সহ কয়েকজনের একটি চক্র পৌরসভার করাইয়াঘোনার স্কিম থেকে পাশের ইউনিয়নের সাহারবিলের ৪০ হেক্টর জমিতে মোটা অংকের টাকায় পানি নিতে বাধ্য করছেন। যা প্রান্তিক কৃষকের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ‘পৌরসভার করাইয়াঘোনার স্কিম পরিচালক পাশের ইউনিয়ন সাহারবিলের রামপুরের কৃষকদের পানি নিতে বাধ্য করতে পারবেন না। কারণ রামপুরেও উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদিত স্কিম পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি এই নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে সমস্যা সৃষ্টিকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সমস্যা সৃষ্টিকারী স্কিম পরিচালকের অনুমোদন বাতিল করে সেখানে নতুন স্কিম পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

রামপুরের বৈধ স্কিম পরিচালক মোহাম্মদ জাবেরের অভিযোগউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হচ্ছেন উপজেলা সেচ কমিটির প্রধান। ইউএনও, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, বিএডিসির প্রতিনিধির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমাকে রামপুর মৌজায় স্কিম পরিচালনার বৈধতা দিলেও পৌরসভার করাইয়াঘোনার স্কিম পরিচালক ফরিদুল আলমের অপতৎপরতায় রামপুর এলাকার শতাধিক কৃষক জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত ফরিদুল আলমের সঙ্গে। এ সময় পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সংযোগ কেটে দিয়ে মুঠোফোন বন্ধ করে দেন তিনি।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘যার যার নির্দিষ্ট এলাকায় তারা সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এর ব্যতিক্রম কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে গন্ধগোকুল উদ্ধার, ইকোপার্কে অবমুক্ত
পরবর্তী নিবন্ধজানুয়ারিতে সড়কে নিহতের ৩৫ শতাংশ বাইক আরোহী