জমজ নবজাতকের মৃত্যুর দায় কার

৫ হাজার টাকার বলি! অভিযুক্ত এনজিও ক্লিনিকের ৪ নারীকে নেওয়া হলো থানায়

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মাত্র ৫ হাজার টাকার জন্য দুই নবজাতককে ‘হত্যার’ অভিযোগ উঠেছে নগরীর একটি এনজিও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ক্লিনিকের চার নারীকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের ঝর্ণাপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন ডবলমুরিং থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন এবং স্থানীয় কাউন্সিলর নূরুল আমিন। নিহত দুই নবজাতকের পিতা মো. মনির পেশায় টেম্পো চালক। তিনি নগরীর দেওয়ানহাট থেকে অলংকার রুটে টেম্পো চালান। তার স্ত্রী লাভলী বেগম (২২) পেশায় গৃহিণী।

মনির আজাদীকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তার স্ত্রী প্রসব বেদনা টের পেলে তাকে ঝর্ণাপাড়ার মাতৃসেবা নরমাল ডিলিভারি সেন্টার নামের ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। আধ ঘণ্টা পর তার জমজ বাচ্চা জন্ম নেয়। ক্লিনিক থেকে বাচ্চাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তারা বাচ্চা দুটিকে নিয়ে যেতে চাইলে ওই ক্লিনিক থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়।

তিনি বলেন, ক্লিনিক থেকে ১০ হাজার টাকা বিল দিলে আমি ৫ হাজার দিয়ে বলি, বাচ্চা তো নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। ১০ হাজার টাকা কেন দিতে হবে? আপাতত ৫ হাজার রাখেন। বাচ্চার চিকিৎসা শেষে বাকি টাকা দেব। কিন্তু তারা বাচ্চাগুলোকে অঙিজেনও দিতে পারেনি, অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেয়নি। তিন ঘণ্টা পর পাড়া প্রতিবেশীসহ গেলে তারা আমাকে মৃত বাচ্চা বুঝিয়ে দেয়।

ডবলমুরিং থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠাই। দেখি স্থানীয়রা ক্লিনিকটি ঘিরে রেখেছে। সেখানে দায়িত্বে থাকা চার নারীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসি।

তিনি বলেন, অভিযোগকারীদেরও থানায় ডেকেছি। যতদূর জেনেছি, বাচ্চা দুটো প্রিম্যাচিউরড (সাত মাস) ছিল। একটি বাচ্চা ডেলিভারির পরপরই মারা যায়। দ্বিতীয়টি কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল। ওই ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতেই মারা যায়। এছাড়া ৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় বাচ্চা দুটোকে অঙিজেন দিতে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল আমিন বলেন, ক্লিনিকটি হোম ডেলিভারি করায়। মঙ্গলবার দুপুরে ধাত্রী ওই মহিলার নরমাল ডেলিভারি করিয়েছে। মনিরের স্ত্রী দুটো বাচ্চার জন্ম দেয়। ধাত্রী জানায় তাদের অঙিজেন লাগবে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু একটি বাচ্চা প্রসবের পরপরই মারা যায়। অন্যটি কিছুক্ষণ পরে মারা যায়। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাইলে তারা দশ হাজার টাকা দাবি করে। মনির পাঁচ হাজার টাকা দেবে জানালে তারা তাতে রাজি হয়ে টাকা দিতে বলে। তখন তার কাছে অত টাকা ছিল না। বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে এসে টাকা দিচ্ছে বললেও শুনেনি তারা। এর মধ্যে দ্বিতীয়টিও মারা যায়।

তিনি বলেন, এ ধরনের এনজিওগুলো সেবার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেপরোয়া ব্যাটারি রিকশার ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধজ্বালানিতে আশ্বাস, বাণিজ্যে জোর