জন্মভূমিতে ফেরার দাবিতে ক্যাম্পে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ

প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ।। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘের

উখিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৯ জুন, ২০২৩ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

নিজ জন্মভূমি রাখাইনে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরার দাবিতে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে ক্যাম্পে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা প্রত্যাবাসন বিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১ টার দিকে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ২৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা জানান, মিয়ানমারে নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ চলাকালে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে, যার জন্য রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। অনেক বছর ধরে ক্যাম্পে কষ্টে জীবনযাপন করছি। আমরা দ্রুত মিয়ানমারে নিজ ভিটায় ফিরতে চাই।

দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যেতে বিশ্ব সমপ্রদায়ের সহযোগিতা দাবি করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতারা জানান, আমরা আর বাংলাদেশের মানুষের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। আমাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং চলাচলের স্বাধীনতাসহ নিজ গ্রামের ভিটেমাটি ফেরত দিলে এই মুহূর্তে চলে যাবে বলে জানান রোহিঙ্গারা।

সমাবেশে রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্দেশ্য বলেন, আমাদের এ সামান্য রেশন ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। আমাদের দ্রুত দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করা হউক। ক্যাম্পে ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা জাতিসংঘের দ্বৈতনীতির নিন্দা জানিয়ে বলেন, রেশন কমিয়ে দেওয়া, ফিরতে ইচ্ছুকদের রেশন বন্ধ করা রহস্যজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থেকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। এ বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) খালিদ হোসেন বলেন, উখিয়াটেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। সেখানে মিয়ানমারে ফিরে যেতে রোহিঙ্গারা কয়েকটি দাবি তোলে। টেকনাফে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ জামাল পাশা বলেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবিতে টেকনাফের ক্যাম্পে ৫টি স্থানে রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নিয়েছে। এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আমরা আর শরণার্থী জীবন চাই না। সামনের দিনগুলোতে আমরা আমাদের জন্মভূমি আরাকানে (রাখাইন) জীবনযাপন করতে চাই। বিশ্ব সমপ্রদায় আমাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে যেন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। ৮ এপিবিএন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, তাদের আওতাধীন উখিয়ার ক্যাম্পগুলোর ১১ টি স্থানে রোহিঙ্গারা দ্রুত মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার দাবিতে সমাবেশ করেছে।

এদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে পাইলট প্রকল্প অবিলম্বে স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে জীবন ও স্বাধীনতার জন্য গুরুতর ঝুঁকির সম্মুখীন হবে রোহিঙ্গারা।

টম অ্যান্ড্রুজ বিবৃতিতে আরো বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযোগী নয়। তিনি বলেন, সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, যিনি এমন বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন যারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক হামলা চালিয়েছিল, তিনি এখন একটি নৃশংস সামরিক জান্তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার অস্বীকার করে বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি ছাত্রলীগ সভাপতিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, রুম ভাঙচুর
পরবর্তী নিবন্ধছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা নিতে থানাকে নির্দেশ