চলে গেলেন সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত

প্রধানমন্ত্রীর শোক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ জুলাই, ২০২১ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

কবি ও বর্ষীয়ান সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত আর নেই। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পটিয়ার ধলঘাট গ্রামের বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দৈনিক আজাদীর সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। চিরকুমার অরুণ দাশগুপ্তের নিকটাত্মীয়দের কেউ দেশে নেই। প্রতিবেশীরা হয়ে উঠেছিলেন তাঁর স্বজন। গতকাল সন্ধ্যায় ধলঘাটে পারিবারিক শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
অরুণ দাশগুপ্তের মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংবাদকর্মী এবং সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। কঠোর লকডাউনের মাঝেও অনেকে পটিয়ার ধলঘাটে গিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। দৈনিক আজাদী পরিবার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অরুণ দাশগুপ্তের জন্ম পটিয়ার ধলঘাটে, ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি। স্থানীয় পাঠশালায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। পরবর্তীতে চলে যান কলকাতায়। সেখানে কালাধন ইনস্টিটিউশন, সাউদার্ন থেকে মাধ্যমিক এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ কলকাতা থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। তারপর বিশ্বভারতী লোক শিক্ষা সংসদে অধ্যয়ন করেন। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে কলকাতার দৈনিক লোকসেবক পত্রিকায় যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে দেশে ফিরে এসে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। সীতাকুণ্ড, মীরসরাই এবং ফটিকছড়ির বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে যোগ দেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে। সহ-সম্পাদক পদে যোগদান করে পত্রিকাটির সহযোগী সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। একইসাথে পালন করেছেন আজাদীর সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্বও। কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক সর্বমহলে ‘দাদামনি’ নামে পরিচিত তিনি।
২০১৫ সালে অবসরে যান অরুণ দাশগুপ্ত। কিন্তু আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক তাঁকে ধরে রেখেছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি আমৃত্যু কাজ করেছেন। অসুস্থ হওয়ার পর গ্রামে চলে গেলেও সম্পাদকীয় পাঠাতেন নিয়মিত। এক পর্যায়ে নিজে লিখতে না পারলেও তিনি মুখে বলতেন, অন্য একজন তা লিখে পাঠাতেন আজাদী কার্যালয়ে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিবেদিত ছিলেন এই সাংবাদিক। হয়ে উঠেছিলেন আজাদীর অরুণ দাশগুপ্ত।
অরুণ দাশগুপ্তের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়াও শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জাতীয় সংসদের হুইপ সামসুল হক চৌধুরী এমপি, চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চবি সিনেট সদস্য ও ঘাসফুল চেয়ারম্যান ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী।
এছাড়া শোক জানান হজরত শাহ সুফি আমানত খান (রহ.) দরবারের শাহজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ খান মারুফ মিয়া, ভাসানী অনুসারি পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, খেলাঘর মহানগর কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এ এস এম জাহিদ হোসেন, উত্তর জেলা খেলাঘর সভাপতি সাংবাদিক মো. খোরশেদ আলম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এম এ কাশেম, আবদুল হক স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান নাট্যজন আতাউর রহমান, সদস্য সচিব অসীম কুমার উকিল এমপি, সদস্য জাহেদুর রহমান সোহেল প্রমুখ।
শোকবার্তায় তারা বলেন, জ্ঞানে, পাণ্ডিত্যে ও অভিজ্ঞতায় অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন অরুণ দাশগুপ্ত। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংগীত, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী এই মানুষটির প্রয়াণ চট্টগ্রামের সাহিত্য এবং সাংবাদিকতা জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে, তা কোনোদিন পূরণ হবে না।
উল্লেখ্য, অরুণ দাশগুপ্ত সাংবাদিকতার পাশাপাশি দীর্ঘসময় ধরে কবিতা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। তার রচিত দুটি গ্রন্থ হল ‘রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য’ এবং ‘যুগপথিক কবি নবীন চন্দ্র সেন’। তার কোনো কবিতার বই কখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা, সাময়িকী, সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে তার অসংখ্য কবিতা ও প্রবন্ধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধআগস্টের প্রথম সপ্তাহে আসছে ১ কোটির বেশি টিকা : স্বাস্থ্যমন্ত্রী