যুক্তরাষ্ট্রে কেন বাঙালি হত্যা, জবাব চান প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের উপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে, কিন্তু নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখে না ।। অতি বাম অতি ডান মিলে বলছে সরকার উৎখাত করতে হবে

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১ মে, ২০২৪ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলেও তারা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে এর জবাব চেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের আগে দেওয়া বক্তব্যে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যার বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সবশেষ ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার নিউ ইয়র্কের বাফেলোতে। সেখানে ইউসুফ এবং বাবুল নামের দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল জাকির হোসেন খসরু নামে আরেক বাংলাদেশির ওপর হামলা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান ১০ এপ্রিল। এরপর ১২ এপ্রিল মিশিগান রাজ্যের ওয়ারেন সিটিতে নিজের বাড়িতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান হোসেন আলী রাজি নামের এক তরুণ। এরও আগে ২৭ মার্চ নিউ ইয়র্কে নিজের বাসায় পুলিশের গুলিতে এক নিহত হন উইন রোজারিও নামে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ। খবর বিডিনিউজের।

এসব ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাঙালি পরপর কতজন মারা গেছে, সেদিনও দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। তারা সেখানে গেছে জীবনজীবিকার জন্য। তাদেরকে এভাবে কেন হত্যা করা হবে? তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। ছোট বাচ্চা ছেলেরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না।

তিনি বলেন, ছোট একটা শিশু সে প্রেসিডেন্টকে কি বলেছে এজন্য তাকে ঘরে ঢুকে গুলি করে মেরেছে। বাড়ির ভেতর ঢুকে সেই বাচ্চাকে গুলি করে মেরেছে। কী জবাব দেবে? যারা মানবাধিকারের গীত গায় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায় তারা এর কী জবাব দেবে? আমি জবাব চাই সেই মানবাধিকার সংস্থা, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং যারা আমাদের খবরদারি করে তাদের কাছে। আমি জবাব চাই যে, আমার বাঙালি কেন মারা যাবে?

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা আন্দোলন দমনের সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখানে আন্দোলনের সময়ে একজন মহিলা প্রফেসর বলছেন, ‘আমি ভার্সিটির প্রফেসর’। পুলিশ যেভাবে তাকে ধরে হাতমোড়া দিয়ে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে চেপে তাকে অ্যারেস্ট করেছে! সেখানে ছাত্রশিক্ষক, তাদের হাতে লাঠি ছিল না, আগুনও ছিল না। তারা কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে মারমুখীও ছিল না। তারপরও আমেরিকার পুলিশ যে আক্রমণ করেছে, এতে সেই দেশে মানবাধিকার যে কতটুকু আছে সেটি প্রশ্ন, কথা বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটি প্রশ্ন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে সেটি আমাদের প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের উপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে, কিন্তু নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখে না। তারা যেভাবে আচরণ করে আমাদের পুলিশ তো সেভাবে করেনি। ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো পুলিশ বিএনপির হাতে মার খেয়েছে। উল্টো তারা পুলিশকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে, এভাবে আমেরিকায় যদি একটা পুলিশের গায়ে কোনো দলের লোক হাত দিত, তারা কি করত?

তিনি বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা, প্রফেসরদের ওপর জুলুম করা, পুলিশ মহিলা প্রফেসরকে যেভাবে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরিয়েছে, এর জবাব আমরা চাই। এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।

অতি বাম, অতি ডান মিলে বলছে সরকার উৎখাত করতে হবে: বাংলানিউজ জানায়, ডানপন্থি ও বামপন্থি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অতি বাম ও অতি ডান এক হয়ে বলছে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বিএনপিসহ সমমনাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়াপূর্ণ, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। তাদের কিছু বক্তব্য আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত করছেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে এবং সব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। শত্রুদের মুখে ছাই দিয়েই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়েছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো খাত নেই যা পিছিয়ে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিএনপি ভোট কারচুপি ও দেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের সূচনা করেছে তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের শিক্ষা নেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেননা আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে এবং দলের অনেক নেতাকর্মী জীবন দিয়ে গেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসার্ভার সমস্যায় কাস্টমসে শুল্কায়ন ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধচার ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রেলের পাহাড়তলী বিভাগীয় অফিস