চট্টগ্রামে তাপমাত্রা কমছে, গরম বেশি

বাতাসে আর্দ্রতা বেশি, তাই এই অবস্থা আরো কয়েকদিন এমন অবস্থা থাকতে পারে : আবহাওয়া অফিস

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

টেম্পারেচার ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফিলস লাইক ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস’। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গরম অনুভূত হচ্ছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। তাৎক্ষণিক তাপমাত্রা জানা যায় এমন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরের আবহাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু গতকাল নয়, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে নগরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে।

তাছাড়া গত ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছয়দিন মাঝারি থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে নগরে। তবে কমেনি গরম অনুভূতি। যেমন গতকাল শনিবার নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলাসিয়াস। যা আগের দিন শুক্রবার ছিল ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১১ এপ্রিল ছিল ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ধীরে ধীরে নগরের তাপমাত্রা কমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় কমেনি গরমের অনুভূতি। তাই স্বাভাবিকভাবে সবার প্রশ্ন, তাপমাত্রা কমলেও গরম কমছে না কেন? একইভাবে তাপমাত্রা কম হওয়ার পরও গরমের অনুভূতি বেশি কেন? সেই প্রশ্নও জাগছে সবার মনে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গরমের অনুভূতি বেশি হওয়া বা তাপমাত্রা কমার পরও গরম বা অস্বস্তি না কমার কারণ হচ্ছে বাতাসে জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকা। চট্টগ্রামে এ আর্দ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে আরো কয়েকদিন অস্বস্তি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।

উল্লেখ্য, বাতাসে জলীয় বাষ্পের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয় আর্দ্রতা দিয়ে। অর্থাৎ তাপের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্প বিরাজ করে। এ জলীয় বাষ্প আবহাওয়ার একটি নিয়ামক। বাতাসে জলীয় বাষ্প কী পরিমাণে আছে তা মাপা যায়। একে বাতাসের আর্দ্রতা হিসাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ বাতাসের আর্দ্রতা বলতে বাতাসে কী পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে তা বোঝানো হয়।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় নগরে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৪ শতাংশ। এছাড়া আবহাওয়া অধিপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নগরে গতকাল সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮০ শতাংশ এবং বিকালে ছিল ৮৪ শতাংশ।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট (শূন্য দশমিক ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বাড়লে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে ৪ শতাংশ। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হলে স্বস্তিদায়ক আবহাওয়া থাকে। ৬০ থেকে যত বাড়বে অস্বস্তিও তত বাড়ে। আবার তাপমাত্রা যখন ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৫০ শতাংশের কম থাকে সেটাকে আরামদায়ক দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু গতকাল তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা দুটোই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকায় গরমও বেশি অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় অস্বস্তিও ছিল বেশি।

জামালখান এলাকার বাসিন্দা শিহাব আজাদীকে বলেন, দেশের অনেক জেলার তুলনায় চট্টগ্রামের তাপমাত্রা অনেক কম। এরপরও চরম অস্বস্তি লাগছে। যদি তাপমাত্রা আরো বাড়ে তাহলে আমাদের অবস্থা তো আরো খারাপ হবে।

আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল বারেক আজাদীকে বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। জলীয় বাষ্প বেশি হলে অস্বস্তিবোধ বেড়ে যায়। সাথে চট্টগ্রামের তাপমাত্রাও তো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে গরম ও অস্বস্তি দুটো বেশি অনুভূত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি কমার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে কমবে। চট্টগ্রামে আজ রাতে (গত রাতে) বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে কাল (আজ) কিছুটা স্বস্তিবোধ অনুভূত হবে। কিন্তু পরশু (আগামীকাল) তাপমাত্রা আবার বেড়ে যাবে। যদি বৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে আগামীকাল অস্বস্তিবোধ বেশি অনুভূত হবে বলে জানান পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের এই পূর্বাভাস কর্মকর্তা।

এপ্রিল মাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে নাকি এ বছর বিশেষ কোনো কারণে এমনটি হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে, বিষয়টি এমন না। এ বছর কোনো কারণে বেড়ে গেছে, তাই অস্বস্তি লাগছে। যেমন এবার চট্টগ্রামে দীর্ঘ সময় ধরে যে তাপপ্রবাহ হচ্ছে তা গত ২০ বছরের রেকর্ডে নেই। এরপরও এবার তো হয়ে গেল। এগুলো বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বে আবহাওয়ায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। যেমন মধপ্রাচ্যে যেখানে বৃষ্টি হয় না সেখানে এবার বৃষ্টি হয়েছে। আবার ভারতের কিছু অঞ্চলে আগেভাগে গরম পড়েছে।

আজকের পূর্বাভাস : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ দুয়েক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি হতে পারে। দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতীব্র গরমের সময় কী খাবেন, কী খাবেন না
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সব হাসপাতালে ডাক্তারদের দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি