তীব্র গরমের সময় কী খাবেন, কী খাবেন না

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২.৬ ডিগ্রিতে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৩ ডিগ্রি। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে।

এ বছরের অবস্থাও গতবারের চেয়ে খুব বেশি আলাদা না। উষ্ণতম মাস হিসেবে পরিচিত এপ্রিল শেষ হতে এখনও ১০ দিন বাকি। কিন্তু এর মাঝেই তীব্র গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। আগামী তিন দিন তাপমাত্রা বাড়তে পারে বলে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট বা আবহাওয়ার সতর্কবার্তাও জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। সেইসাথে গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন খবর আসছে, দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে চলেছে। তবে বছরের এই সময়ে ডায়রিয়া আসলে কেন হয়? ডায়রিয়ার মূল কারণ কিন্তু খাবারে গণ্ডগোল। তাই এমন পরিস্থিতিতে ডায়রিয়ার মতো অসুখ এড়াতে এবং নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে খাবারদাবারে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। খবর বিবিসি বাংলার।

যেসব কম খাওয়া উচিত : কিছু খাবার আছে, যেগুলো খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হতে পারে। ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম তেমনই কিছু খাবার সম্বন্ধে জানিয়েছেন। এগুলো হলো মশলাজাতীয় খাবার, ডিম, আইসক্রিম ও কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, চাকফি, দুগ্ধজাতীয় খাবার, স্টেক, তেলচর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও লবণ ইত্যাদি।

গরমে যেগুলো খাওয়া যেতে পারে : গরমে খাওয়া যাবে এমন খাবার সম্বন্ধে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ তাসনিম। খাবারগুলো হলো কম মশলা জাতীয় খাবার, শাকসবজি, পাতলা স্যুপ, নিরাপদ পানি, ডাবের পানি, লেবু পানি, ফলমূল, কাঁচা আমের শরবত, টক দই, ডিটক্স ওয়াটার (পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনার রসের সমন্বয়ে তৈরি পানীয়) ইত্যাদি।

পুষ্টিবিদ তাসনিম বলেন, একজনের জন্য যে খাবারটি খাওয়া ভালো হবে, তা সবার জন্য নাও হতে পারে। যেমন, অনেকের শশা খেলে সমস্যা হয়।

খাবার সংরক্ষণে সতর্কতা : গরমের সময় চারপাশে এত বেশি তাপমাত্রা থাকে যে, খাবারগুলোতে সহজে ব্যাকটেরিয়া হতে পারে। তবে খাবার একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় থাকলে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় না। তাপমাত্রা লিমিট ক্রস করলে ব্যাকটেরিয়া হয়। দেখা গেল, সকালে একটা খাবার রান্না করেছি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা বাদে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে। তখন ব্যাকটেরিয়া হয়। দেখে মনে হবে ফ্রেশ, কিন্তু ভেতরে ব্যাকটেরিয়া।

তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে ও ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় না বলে জানান পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম। তার পরামর্শ, গরমের সময় খাবার সঠিকভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। এমনকি খাবার বারবার গরম করার ব্যাপারেও তিনি নিরুৎসাহিত করেন। এছাড়া সবসময় ফ্রিজে খাবার রাখা মানেই যে তা নিরাপদ, এমন না। বছরের এই সময়ে বারবার লোডশেডিং হয়, তাই ফ্রিজের খাবারেও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে। ফ্রিজের টেম্পারেচার ঠিক রাখতে হবে এবং খাবার বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। তবে ফ্রিজে অনেকদিন খাবার রাখলে তার পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে। তাই বড়জোর দুদিন ফ্রিজে খাবার রেখে তা খেতে পারি আমরা। তারপর আবার নতুন করে রাঁধতে হবে। তবে ফ্রিজ থেকে বের করা খাবার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া যাবে না। খাবার বের করার পর তা কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপে রেখে দিয়ে গরম করতে হবে। আবার খাবার গরম করার পর সঙ্গে সঙ্গে না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

ডায়রিয়া এড়াতে করণীয় : বাংলাদেশে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এ বছরও তা শুরু হয়ে গেছে। গরমের সময় ডায়রিয়া এড়াতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি একসাথে ভরপেট না খেয়ে কিছুটা বিরতি দিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদ তাসনিম। তিনি বলেন, দুধ ও ভাতে যে ব্যাকটেরিয়া হয়, তা ভয়ংকর ডায়রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই এগুলো ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে নরমাল টেম্পারেচারে এনে খেতে হবে। এছাড়া মাছি ডায়রিয়ার সংক্রমণ ছড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে। সেজন্য সবসময় সব খাবার ঢেকে রাখতে হবে। রাস্তার খাবার যেমন ফুচকা, চটপটি, লেবুর শরবত খেতেও বারণ করেন তিনি।

এছাড়া ডায়রিয়া প্রতিরোধে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছে খাবার প্রস্তুত, স্পর্শ করা, পরিবেশন করা ও খাবার খাওয়ার আগে, টয়লেট থেকে বের হয়ে, বাইরে থেকে ফিরে এসে হাত ধুয়ে নেওয়া। কারণ হাত দিয়ে মানুষ সবকিছু স্পর্শ করে এবং সবচেয়ে বেশি জীবাণু বহন করে। ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে পানি। তাই যে পানি আপনি পান করবেন তা যেন বিশুদ্ধ পানি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরশিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি, খাতুনগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে তাপমাত্রা কমছে, গরম বেশি