চট্টগ্রামের হার্টের রোগীদের এখন বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না

সিএসসিআরের কার্ডিয়াক সেন্টার উদ্বোধনে ডা. মোমেনুজ্জামান রোগীদের প্রতি ডাক্তারদের আরো সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ আজাদী সম্পাদকের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশে ১৫২০ বছর আগে বলতে গেলে হার্টের চিকিৎসা ছিল ইসিজি নির্ভর। আর্থিক সামর্থ্যবান হার্টের রোগীরা পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে বিদেশ চলে যেতেন। এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তদেরও জমি বিক্রি করে দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা আমরা দেখেছি। ওইসময় দেশে বাইপাস করাতে রোগীকে রাজি করানোই কঠিন ছিল।

বলতে গেলে ডাক্তারদের প্রতি রোগীদের কনফিডেন্স ছিল না। আর কনফিডেন্স বাড়াতে ডাক্তাররাও রোগী খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে বন্ধুর সে পথ আমরা পাড়ি দিয়ে এসেছি। চট্টগ্রামে এখন ৬টি সেন্টারে হার্টের চিকিৎসা হয়। চট্টগ্রামের রোগী চট্টগ্রামেই হার্টের চিকিৎসা নেবে, একসময় এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। আমার মনে হয়, বর্তমানে আমরা সে পর্যায়ে এসে গেছি।

অর্থাৎ চট্টগ্রামের হার্টের রোগীরা এখন চট্টগ্রামেই সেবা পায়। বাইরে তেমন একটা যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।’ বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র সিএসসিআর’র কার্ডিয়াক সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. এন এ এম মোমেনুজ্জামান এসব কথা বলেছেন। গতকাল রাতে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।

সিএসসিআর কার্ডিয়াক’র ব্যবস্থাপনা অংশীদার ডা. জামাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অপর ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. কায়সার নসরুল্লাহ খান। অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. . রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, সিএসসিআর’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুলকুতুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. একরামুল হক, সিএসসিআর কার্ডিয়াকএর ক্যাথল্যাব ডাইরেক্টর ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. এন এ এম মোমেনুজ্জামান আরো বলেন, এখন রোগী রয়েছে। তবে তাদের ধরে রাখতে হলে কনফিডেন্স দিতে হবে। রোগীদের কাউন্সিলিংটা অনেক বেশি জরুরি। ডাক্তারদের কোনো ভুল যাতে আমাদের আগের জায়গায় নিয়ে না যায়। কর্পোরেট হসপিটালে সর্বাগ্রে ইনকামে নজরটা থাকে। তবে ডাক্তার বেইজড হাসপাতালগুলোতে সেটা হয় না।

যেমনসিএসসিআর কার্ডিয়াকএ ৩২ জন ডাক্তার রয়েছেন। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ ডাক্তার বেইজড একটি প্রতিষ্ঠান। এ ধরণের প্রতিষ্ঠানে মানবিক দিক বা সেবায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকে।

আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ সিএসসিআর কার্ডিয়াক চট্টগ্রামে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে জরুরি হৃদরোগের চিকিৎসাসেবায় নব সংযোজিত আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতিসমূহ বিশেষ ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে।

তবে সেন্টারে জায়গা সংকটের কথা উল্লেখ করে আলাদা ভবনে এ সেন্টার গড়ে তোলার পরামর্শ দেন ডা. এন এ এম মোমেনুজ্জামান। তিনি বলেন, একই সাথে কার্ডিয়াক সার্জারি সুবিধা চালু করা জরুরি। আর হার্ট ফেইলিওর রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হার্ট ফেইলিওর ক্লিনিক চালুরও পরামর্শ দেন প্রখ্যাত এ চিকিৎসক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. কায়সার নসরুল্লাহ খান বলেন, চট্টগ্রামের আকার এবং জনসংখ্যার তুলনায় হৃদরোগ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রের সংখ্যা এখনও যথেষ্ট নয়। সিএসসিআর কার্ডিয়াক এর যাত্রা নিশ্চিতভাবে এই অপ্রতুলতা নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। সিএসসিআর কার্ডিয়াকএ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি এর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত টিমের ভূয়সী প্রশংসা করে চট্টগ্রামে কার্ডিয়াক সেবা একদিন বিশ্বমানের হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ চিকিৎসক।

সৃষ্টিকর্তার পর ডাক্তারদের উপরই বেশি ভরসা রাখতে হয় মন্তব্য করে বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, এজন্য আপনাদের (ডাক্তারদের) প্রতি আমার অনুরোধ, রোগীদের একটু ভালো ভাবে দেখবেন।

ডাক্তারদের সম্পর্কে প্রায়ই একটি অভিযোগ শোনা যায়, চেম্বারে একজন রোগী দেখার সময় সামনে আরো তিনজন বসিয়ে রাখেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কোনো জটিলতা থাকলে ওই রোগী সবার সামনে তা কিভাবে বলবেন? কিন্তু রোগীর তো সব কথাই ডাক্তারকে খুলে বলা প্রয়োজন। রোগীদের প্রতি ডাক্তারদের আরো সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ জানান সাংবাদিকতায় একুশে পদক পাওয়া এম এ মালেক।

ডা. আনিসুল আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা. নূর উদ্দিন তারেক। বক্তব্যে সিএসসিআর কার্ডিয়াক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও বিশ্বের সর্বাধুনিক ক্যাথল্যাবের বৈশিষ্ট্য বিশেষতঃ করোনারি রোড ম্যাপ, আইবাস ও আইএফআরএর উপযোগিতা তুলে ধরে ডা. নূর উদ্দিন তারেক বলেন, সর্বাধুনিক এসব প্রযুক্তি চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম সিএসসিআর কার্ডিয়াক সেন্টারে চালু করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে এইসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলভাবে বেশ কিছু স্টেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। সিএসসিআর কার্ডিয়াকএ দক্ষ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান, নার্স ও সাপোর্ট স্টাফের সমন্বয়ে অত্যন্ত কার্যকর টিম গঠন করা হয়েছে। যারা বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণকে সার্বক্ষণিক বিশ্বমানের কার্ডিয়াক সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সিএসসিআর কার্ডিয়াক’র ক্যাথল্যাব ডাইরেক্টর ডা. ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এই কার্ডিয়াক সেন্টারে সেবা চালু হয়েছে গত বছরের ২১ অক্টোবর। অর্থাৎ তিন মাস আগে। এই সময়ে অনেকগুলো কেস আমরা সফল ভাবে করেছি। ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকির সম্ভাবনা নিরসনে সিএসসিআর কার্ডিয়াক কাজ করে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. জামাল আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। কিন্তু এখানে পূর্ণাঙ্গ একটি কার্ডিয়াক হাসপাতাল নেই। চট্টগ্রামে বেসরকারি খাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সকলের সহযোগিতা চান তিনি। অচিরেই জায়গার সমস্যা সমাধান এবং সিএসসিআর কার্ডিয়াকএ কার্ডিয়াক সার্জারিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিভাগ সংযোজন করার কথা জানান ডা. জামাল আহমেদ।

চট্টগ্রামের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ছাড়াও অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসক এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা পঞ্চম জয় তুলে নিল বরিশাল
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা