চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্বার্থে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতির সাথে বসবাসের চট্টগ্রামবাসীর যে অধিকার সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করলে তা কেড়ে নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একইসঙ্গে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে তা চট্টগ্রামবাসীর সাথে ‘অবিচার’ করা হবে বলেও দাবি করেন তিনি। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্বার্থে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে। সিআরবিতে হাসপাতাল কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। প্রকৃতি রক্ষায় চট্টগ্রামবাসী যে আন্দোলন করছেন তার সঙ্গে আমিও একমত। খসরু বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সেসব লোকগুলোর প্রতি অবজ্ঞা করা হচ্ছে যারা ওখানে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন, হাঁটাচলা করেন এবং বসে সময় কাটান। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঁচার যে অধিকার তা তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে।
আমীর খসরু বলেন, প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে অর্থাৎ প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের বসবাস করতে হবে। প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। এসব নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন চলছে। সে জায়গায় চট্টগ্রামে প্রকৃতি নষ্ট করে যারা হাসপাতাল করতে চায় তারা কোথায় বসবাস করে? তাদের চিন্তা-ভাবনায় বা কেমন? বিশ্ব চলছে একদিকে তারা চলছে অন্যদিকে!
তিনি বলেন, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সারা বিশ্বে এখন আন্দোলন চলছে। মানুষের জীবনযাপন, উন্নয়নসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রকৃতির সাথে কিভাবে সামঞ্জস্য রাখা যায়, প্রকৃতির ক্ষতি না করে কিভাবে মানবজীবন পরিচালনা করা যায় সেসব নিয়েই সারা পৃথিবীতে আলোচনা হচ্ছে। সমস্ত উন্নয়নের ভিত্তি হতে হবে প্রকৃতির প্রতি সম্মান রেখে এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে। তাহলে ওই উন্নয়ন টেকসই হবে। সেখানে চট্টগ্রামে প্রকৃতি ধ্বংসের চেষ্টা কেন হবে?
খসরু বলেন, ইতোমধ্যে যতটুক প্রকৃতি আমরা ধ্বংসের করেছি সেটা কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর চট্টগ্রামে যতটুক অবশিষ্ট আছে সেটা ধ্বংসের পাঁয়তারা হচ্ছে। এটা তো সমর্থন করা যাবে না। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদি প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল করে সেটা হবে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি অবিচার।
তিনি বলেন, রেলওয়ে তো বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জমিদার। সারা চট্টগ্রামে তাদের জায়গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। যদি রেলওয়ের জায়গা ব্যবহার করে হাসপাতাল করতে চায় ওসব জায়গা করতে পারে। মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার জায়গায় কেন করতে হবে? শহরের বাইরেও প্রচুর জায়গা আছে। সেখানে করতে পারে। শহরের বাইরে এবং জনসমাগম হয় এমন স্থান এড়িয়ে অনেক হাসপাতাল হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের সাথে আরো অনেক কিছু সম্পৃক্ত থাকে। যদি হাসপাতাল করা হয় তাহলে সিআরবির পুরো এলাকার যে প্রাকৃতিক চরিত্র তা পাল্টে যাবে।
আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় জায়গাগুলোর অন্যতম স্পট সিআরবি। এখান দিয়ে ড্রাইভ করে যেতে বা হেঁটে যেতেও সবার ভালো লাগে। সবুজে ঘেরা এ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ আনন্দবোধ করে, স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে এবং স্বস্তি লাগে। প্রাণ ফিরে আসে। মন জুড়ানো এমন পরিবেশ ধ্বংস করে কেন হাসপাতাল করতে হবে?
তিনি বলেন, সিআরবি তো হেরিটেজ প্রপার্টি। এসব প্রপার্টিকে ধ্বংস করা তো ঠিক না। এখানে একসময় রেলওয়ের সদর দপ্তর ছিল। এখানকার যে আর্কিটেকচার তা দৃষ্টিনন্দন। এসব নিয়েই তো আমাদের চট্টগ্রাম, আমাদের ঐতিহ্য। কাজেই চট্টগ্রামের এতিহ্যের স্বার্থে এসব আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একসময় এখানে পর্যটন স্পট হবে। মানুষ দেখতে আসবে। তিনি বলেন, এটা কেবল হাসপাতাল নির্মাণ না। সরাসরি প্রকৃতির সাথে যুদ্ধে নেমেছে। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যারা বাঁচতে চাচ্ছে তারা পক্ষান্তরে নিজের পায়ে কুড়াল মারছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না
পরবর্তী নিবন্ধনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে কার