সংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না

আব্দুচ ছালাম

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান এবং নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম বলেছেন, সংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। তিনি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত করা, চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস ফুটো করে দেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আবদুচ ছালাম বলেন, আধুনিক সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে আমরাও এগিয়ে যেতে চাই, এগিয়ে থাকতে চাই। তাই, অন্যান্য আধুনিক সুবিধার নানা সংযোজনের সাথে চট্টগ্রামে আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রও সংযোজিত হবে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। সিডিএ’র অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের ফাঁকা প্লটে আধুনিক হাসপাতালের উদ্যোগ নিয়ে ছিলাম আমি। সেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এভারকেয়ার হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের মানুষ এটিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর সুফল পাচ্ছে। ইউনাইটেড প্রস্তাবিত ৫০০শয্যার ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চট্টগ্রামে হোক, এটিকেও আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। কিন্তু, এটি কোন ভাবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য নষ্ট করে কিংবা জনস্বার্থের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে নয়।
তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থান ও বন্দরের সুবিধা বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্মেন্ট আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের অদুরেই নৈসঃর্গিক শোভামন্ডিত খুব বেশি উঁচু নয় এমন পাহাড়ের মাঝখানেই ১৮৯৯ সালে সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংটি নির্মাণ করে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং শব্দত্রয়ের আদ্যক্ষরে ভবনটি সিআরবি নামে পরিচিতি লাভ করে, আর পাহাড়টিকে সিআরবি পাহাড় বলা হয়ে থাকে। অধুনা, পাহাড়টি রেলওয়ের নামে খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয় অর্থাৎ সিআরবি পাহাড়টি রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তি। বর্তমানে কেবল রেলওয়ে বিল্ডিংটিই নয়, পুরো পাহাড়টিকেই মানুষ সিআরবি নামে চেনে। রেলওয়ের মালিকানায় হলেও সিআরবি চট্টগ্রামের আপামর মানুষের সম্পদ। এই সম্পদ নিয়ে নয় ছয় করার কোন অধিকার কারো নেই।
আবদুচ ছালাম বলেন, মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান এবং ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী সিআরবি এলাকাটি কালচারাল এন্ড হেরিটেজ এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। এখানে কোন প্রকার বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়তে যাওয়া সরকারের হেরিটেজ ও হর্টিকালচার নীতিমালার পরিপন্থি। জনস্বার্থ পরিপন্থী কোন কিছু করতে যাওয়া হবে আমাদের জন্য একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, এখানে গাছ না কেটে হাসপাতাল নির্মাণের অনেক সমাধান হয়তো অনেকেই দেখাতে পারবেন। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতিও ভেবে দেখা উচিৎ। প্রস্তাবিত মেডিকেল হাসপাতাল ও নার্স ট্রেইনিং সেন্টারের কার্যক্রম বহুমুখি কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। এটি বাস্তবায়িত হলে এর সাপোর্টিং এ্যাক্টিভিটিজ হিসেবে আগত অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়ি পার্কিংয়ের চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে, ছাত্রাবাস হবে, স্টাফ কোয়ার্টার হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ না চাইলেও সন্নিহিত এলাকায় একটি বাজার গড়ে উঠবে। অগণিত ফার্মেসি গড়ে উঠতে থাকবে, ক্লিনিক নির্মিত হতে থাকবে। এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে আগত রোগীদের আপতকালীন অবস্থানের জন্য হোটেল, রেস্তোরা গড়ে উঠার সম্ভাবনাও প্রবলভাবে দেখা দিবে। ফলে এই এলাকায় শব্দ ও বায়ু দূষণ হবে একটি অনিবার্য পরিণতি। সিআরবি এলাকা তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিলুপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম শহরের মানুষের কাছে তার যে মৌলিক গুরুত্ব রয়েছে তা হারাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযারা জনগণের হৃদপিণ্ড ছিন্ন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো না
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্বার্থে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে