যারা জনগণের হৃদপিণ্ড ছিন্ন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো না

খোরশেদ আলম সুজন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

সিআরবিকে নগরবাসীর হৃদপিণ্ড আখ্যায়িত করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, যারা জনগণের হৃদপিণ্ড ছিন্ন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। জনগণ তো সিআরবিতে হাসপাতাল করতে চায় না। তবু জোর করে করতে চাচ্ছে কেন?
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। নগর আওয়ামী লীগের এ সহ-সভাপতি বলেন, রেলওয়ের কাজ তো হাসপাতাল ব্যবসা করা না। আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি রেলওয়ের আসল উদ্দেশ্য পূরণে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা না করে ব্যবসা করবে কেন?
তিনি বলেন, লাইন সমপ্রসারণ, ইয়ার্ড নির্মাণ, কারখানা নির্মাণসহ যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নামমাত্র মূল্যে জমি অধিগ্রহণ করে রেলওয়ে। শর্ত অনুযায়ী অধিগ্রহণকৃত জায়গা ১২ বছরের মধ্যে স্ব-স্ব কাজে ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় জমির মালিককে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক তারা জমির সঠিক ব্যবহার না করে লিজ দিয়ে ব্যবসা করছে। এখন তারা যখন যে স্বার্থে জমি নিয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি তাদের উচিত জমি ফেরত দেওয়া।
সুজন বলেন, হাসপাতাল সেটা তো ইউনাইটেডের ব্যবসা। জমি কিনে অন্য কোথাও ব্যবসা করুক। সরকারি জায়গায় কেন করবে? আগ্রাবাদ, পতেঙ্গায় পাবলিক হাসপাতাল করার জন্য রেলওয়ের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছিল। তারা ছাড় করেনি। তিনি বলেন, মন্ত্রী সাহেব যদি স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে চান তাহলে ঠাকুরগাঁওয়ে করুক। সেখানকার স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা বেশি খারাপ। আমাদের এখানে ঠেলাঠেলি করছে কেন?
হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারকে জনগণের সাথে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করেন চসিকের সাবেক এ প্রশাসক। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেরও আগেও সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য আমলা এবং দলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বিপথগামীরা চেষ্টা করেছিল। বর্তমানেও সে চেষ্টা হচ্ছে। জনগণ যেটা চায় না সেটা সরকারের নাম দিয়ে করতে চায়।
তিনি বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যগত এলাকা। ব্রিটিশ আমলের ভবন, আঁকাবাকা রাস্তা, পাহাড়, টিলা ও শতবর্ষী নানা প্রকারের গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ এ এলাকাটি। যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠা নগরবাসী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ছুটে যান সেখানে। সিআরবির গাছ গাছালিগুলো সন্ধ্যায় নানারকম পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, বলী খেলা, বসন্ত উৎসবসহ নানা প্রকার দেশীয় উৎসবে বাঙালির সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয় এলাকাটি। মূলত সিআরবি পুরো এলাকাটি সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। এখানে আছে ব্রিটিশ আমলের তৈরি মনোমুগ্ধকর স্থাপনা এবং বাংলো। বলা যায় চট্টগ্রামের বুকে নয়নাভিরাম একখণ্ড সবুজ চত্বর এটি। এ সবুজ ধ্বংসের চক্রান্ত চট্টগ্রামবাসী মেনে নেবে না। কোনোভাবেই গ্রীন হেরিটেজের অংশে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ চলবে না।
তিনি বলন, চট্টগ্রামের মাস্টার প্ল্যানে সিআরবি এলাকাকে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেই বিধিনিষেধকে অমান্য করে সংরক্ষিত এলাকাটিকে বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে! যারা বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা এবং সিআরবি সন্নিহিত মাস্টারপ্ল্যান এলাকার ভূমি নগর উন্নয়ন কমিটির ছাড়পত্র ছাড়া জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।
সুজন বলেন, সিআরবির সবুজ প্রকৃতি ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আগামীকাল ১৯ জুলাই বিকেল ৩টায় সিআরবি চত্বরে প্রতিবাদী জাগরণ যাত্রা ও নাগরিক সমাবেশ আয়োজন করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে পৌঁছেছে সিনোফার্মের ১০ লাখ ডোজ করোনা টিকা
পরবর্তী নিবন্ধসংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না