গমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ মে, ২০২২ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ভারতীয় গম রপ্তানি বন্ধের জেরে পাইকারিতে ঊর্ধ্বমুখী গমের বাজার। গত তিনদিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি ভারতীয় গমের দাম বেড়েছে ১১০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত তাদের নিজেদের বাজার ঠিক রাখার জন্য গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে গমের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। এর আগে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরপর এক দফা বাড়ে গমের দাম। সে সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার প্রতি মণ ভারতীয় গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ টাকায়। শনিবার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫২০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন গম ব্যবসায়ী বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গমের বাজার বাড়তে শুরু করে। ইউক্রেন-রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেন-রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে এরপর প্রতিবেশী দেশ ভারতের গমের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। ভারত ছাড়া আমাদের দেশে গম আসে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আর্জেন্টিনা থেকে। তবে সেইসব দেশের গমে খরচ পড়ছে প্রতি মণে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কানাডায় গমের উৎপাদন কম হওয়ার তারাও পর্যাপ্ত রপ্তানি করতে পারছে না। তবে ভারত গত বছরও একবার গম রপ্তানি বন্ধ করেছিল। কারণ, গমের মজুদ কমে যাওয়ার ফলে বাজার ঠিক রাখার জন্য ভারত এই ধরনের উদ্যোগ সবসময় নেয়। ভারতের গম কম আমিষযুক্ত। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও আর্জেন্টিনার গম অধিক আমিষযুক্ত। ময়দা তৈরিতে এই গম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। গমের সংকট থাকায় গম থেকে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্য দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে বেকারি পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ভারত গম রপ্তানি বন্ধ করায় স্বাভাবিকভাবে বাজারে দামের একটা প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে দেশ দুটি থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই ভারতীয় গমের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে ভারত সরকার আবার ঘোষণা দিয়েছে, সরকারিভাবে চাইলে তারা গম রপ্তানি করবে। কেবল বেসরকারি পর্যায়ে রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। এটা ঠিক, গম আমদানির সিংহভাগ আসে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। এ ক’দিন বাজার বন্ধ ছিল। আগামীকাল (্‌আজ) বাজার খুললে আমরা ভারতীয় গম রপ্তানি বন্ধের প্রকৃত চিত্র দেখতে পারব। অন্যদিকে এখন আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ব্যাংকগুলোতে প্রতি ডলারে ৯৫ টাকা পর্যন্ত আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। তেলের দাম নিয়ে বলার অবকাশ রাখে না। সম্প্রতি দেখলাম পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গমের বাজার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরপরই এক দফা বাড়ে। এখন ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পরপর আরেক দফা বাড়ছে। আসলে রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পরপর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ যেসব গম বর্তমানে ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে রয়েছে সেগুলো তো আগেই আমদানি করেছে। মূল কথা হচ্ছে ব্যবসায়ীরা কোনো একটা অজুহাত পেলেই সাথে সাথে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এ বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের তদারকি করা উচিত বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাটকীয়তা শেষে কর্ণফুলীতে নৌকা পেলেন সেলিম হক
পরবর্তী নিবন্ধঅত্যাধুনিক পেট্রল বোট এলো বন্দরের জন্য