কোর্ট হিল নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে জেলা প্রশাসন

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

‘কোর্ট হিল নিয়ে জঘন্য মিথ্যাচার হচ্ছে। যা সত্যিই অপমানজনক এবং উদ্দেশ্যমূলকও বটে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করে বরিশালের মত অনাখাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।’ পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন দুটি ভবন নির্মাণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে গতকাল রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন এসব কথা বলেন। এছাড়া মানহানিকর বক্তব্যের জন্য জেলা প্রশাসকের ক্ষমা চাওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনজীবী সমাজ সংঘাতে বিশ্বাস করে না। তাই অতীতের মত জেলা প্রশাসনের সকল অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আইনি পথে মোকাবেলা করা হবে।
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১১ টায় আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান কার্যকরি কমিটির নেতাদের পাশাপাশি সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পড়েন সাধারণ সম্পাদক এএইএম জিয়াউদ্দিন। বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, চাহিদা বিবেচনায় আইনজীবী সমিতির নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ১৯৭৭ সালের ৩০ ডিসেম্বরে রেজিস্ট্রিকৃত ১৪৮৮৮ নম্বর লিজ দলিল মূলে চট্টগ্রাম কোর্ট হিলে সরকারি খাস জমি আইনজীবী সমিতির বরাবর হস্তান্তর করা হয়। সমিতির ভবনসমূহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়। দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী নিজেই ৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। ভবন সমূহের নির্মাণ কাজও সংশ্লিষ্ট সময়ে মন্ত্রীরা উদ্বোধন করেন। ভবনগুলো নির্মাণের আগে সিডিএ থেকে অনুমোদনও নেয়া হয়।
ভবনসমূহ নির্মাণের সময় কোন পাহাড় টিলা কাটা হয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, পাহাড়ের ঢালু রক্ষা করেই ধাপে ধাপে ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়। যদি টিলা কাটা হত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই তখন বাধা দিত। সবমিলিয়ে আমরা বৈধভাবে আছি। অবৈধ বলার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রয়েছে এ সমিতির আত্মার বন্ধন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন স্বৈরশাসকের পুলিশ বাহিনীর গুলির মুখে আইনজীবীরা নিজেদের মানবঢাল বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জীবন রক্ষা করেন।
এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, অতীতে চট্টগ্রাম স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতিকে আমাদের লিজকৃত জায়গা পুনরায় লিজের উদ্যোগ গ্রহণ করলে সমিতির পক্ষে ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব ঘোষণার জন্য ও উক্ত লিজ বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে ১ নম্বর বিবাদী করে মামলা (নম্বর ৮৭/৯৪) দায়ের করা হয়। যা পরবর্তীতে ১ম অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্থানান্তরিত হয়ে মামলা নম্বর ৩৮/৯৭ হয়। উক্ত মামলা ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দোতরফা সূত্রে আইনজীবী সমিতির পক্ষে আদালত কর্তৃক ডিক্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও সমিতির লিজপ্রাপ্ত সম্পত্তিতে বেআইনি অনুপ্রবেশ না করতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার ভূমির বিরুদ্ধে ২৪০/০৫ নম্বর ঘোষণা ও স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা করে সমিতি নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আদালত ভবনে উঠার মুখে একটি তোরণ নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলা হয়। সেখানে বড় অক্ষরে ‘আদালত ভবন, চট্টগ্রাম’ এবং নিম্নে ছোট অক্ষরে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম’ লিপি করার সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা প্রশাসনই সমিতির জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৪ সালে সমিতির আইনজীবী শাপলা ভবন নির্মাণের সময় সীমানা নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসকের সম্মতিতে ও পরামর্শে সমিতির নেতৃবৃন্দ ও তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রমাসক (রাজস্ব), জেলা প্রশাসনের কানুনগো, সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে উক্ত জায়গা পরিমাপ করা হয়। পরিমাপে সমিতির জায়গার সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, সমিতির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমিতির লিজপ্রাপ্ত জায়গায় বর্তমানে শাপলা ভবনের পাশে ১ টি ও আইনজীবী ভবনের পাশের একটি ভবন নির্মাণ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বর্তমান জেলা প্রশাসক বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত দপ্তরে পত্র প্রেরণ করে ভবন নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।
সিডিএর একটি প্রতিবেদনে স্পষ্টই উল্লেখ রয়েছে, কোর্ট হিল এলাকায় অনুমোদনহীন স্থাপনাগুলো থেকে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ভাড়া উত্তোলন করা হয়। অথচ তারা এসব উচ্ছেদের ব্যবস্থা না নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমিতির স্থাপনাসমূহ নিয়ে মিথ্যাচার করে আসছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের ছত্রছায়ায় এল এ শাখা দুর্নীতির বিষয় ওপেন সিক্রেট। ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন ছাড়া অধিগ্রহণের কোন চেক হস্তান্তর হয় না। কমিশনের উক্ত টাকা জেলা প্রশাসকের সকল স্তরে বন্টন হয়। পুরাতন আদালত ভবন এলাকাকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি এল. এ শাখার কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী রাতের আঁধারে ঘুষ দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় সমিতির কাছে ধৃত হয় এবং পরবর্তীতে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের কাছে সোপর্দ করা হয়। লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন এএইএম জিয়া উদ্দিন। একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিথ্যাচারগুলো প্রত্যাহার না করলে এবং ক্ষমা না চাইলে অবশ্যই জেলা প্রশাসকের অপসারণ চাইতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেফার কন্টেনারের সংকট মৎস্য রপ্তানি ব্যাহত
পরবর্তী নিবন্ধপরীর পাহাড় সংক্রান্ত সব বিষয় সরকারই দেখছে, আমার কোনো বক্তব্য নেই : ডিসি