শেষ দিনে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিড়

ঋত্বিক নয়ন | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

লোডশেডিংয়ের কবলে ওষ্ঠাগত প্রাণ, যানজটের যন্ত্রণায় দুর্বিষহ জীবন। তার সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর রুক্ষ প্রকৃতি নগর জীবনকে বারে বারে স্থবির করে দিতে চাইছে। আমোদ প্রমোদের ইচ্ছে, সময়, স্থান ক্রমশ কমছে। বাড়ছে সংকট। এ একঘেঁয়ে জীবনে যে ক’টি আয়োজন নগর জীবনে দুদণ্ড স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দেয় তার মধ্যে অন্যতম জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও এ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলা। গতকাল ২৬ এপ্রিল শেষ হলো এ আয়োজনের নির্ধারিত সময়সূচি। তবে বিগত সময়ের মতো এলাকা জুড়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে, দূরদূরান্ত থেকে আসা দোকানিরা থাকবেন অন্তত আরো দুই/তিন দিন। যতোই যান্ত্রিকতায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠি না কেন, আমাদের ভেতরে যে নিত্য বইছে লালন, হাছন, রাধারমণ কিংবা বাউল শাহ আব্দুল করিম, হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ আর চেতনাতে নজরুল। তাই চট্টগ্রামবাসীও অপেক্ষায় থাকবে আগামী বছর কখন উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক বাহক জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা শুরু হবে।

জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলার শেষ দিন গতকাল শুক্রবার ছিল উপচে পড়া ভিড়। প্রতিটি স্টলের সামনে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে মানুষ আর মানুষ। ঢাকা, ফেনী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্ল্লা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বিশাল এলাকা জুড়ে বসে কয়েক হাজার দোকান। বিক্রি হয় হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি, বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র, কাঠের পুতুল, নকশি কাঁথা, প্লাস্টিক সামগ্রী, নানা ধরনের ফলদ, ঔষধি ও বনজ গাছ ইত্যাদি। আরও ছিল নিত্যব্যবহার্য সব সামগ্রী আর ঘর সাজাবার নানান উপকরণ। শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায় লোকজনের ভিড়। ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি চলছে বিকিকিনি। আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতোয়ালী, শাহ আমানত মাজার এলাকা থেকে সিনেমা প্যালেসকোথাও ফাঁকা নেই। সবখানে হাজার হাজার মানুষ। নারীপুরুষশিশু একাকার হয়ে গেছে।

শেষ দিনে মেলায় আসা প্রত্যেকে কিছু না কিছু কিনেছেন। বিশেষ করে ঝাড়ু, সাধারণ পাটি, শীতল পাটি, ফুলের টব, মাটির কলসি, পানি রাখার মাটির জগ, পাপোষ, দা, বটিসহ কামার শিল্পের তৈজসপত্র, মাটির ব্যাংক কিনেছেন বেশিরভাগ মানুষ। মেয়েদের তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল, চুড়ি ও ইমিটেশনের কিনতে দেখা গেছে। শিশুদের খেলনাও বিকিকিনি হয়েছে দেদারছে। মেলায় আসা সব ধরনের পণ্যই বিকিকিনি হয়েছে। খাবারও বিক্রি কম হয়নি। জিলাপি, চনামনার ঠ্যাং, চালের জিলাপিসহ সব ধরনের খাবার বিক্রি হতে দেখা গেছে। মেলায় বিশেষ করে প্রায় প্রতিজনের হাতেই দেখা গেছে ঝাড়ু। লোকজন একেবারে এক বছরের জন্য ঝাড়ু কিনে রাখেন মেলা থেকে। এ কারণে ঝাড়ুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। অনেকে ১০টি পর্যন্ত কিনে নিয়েছেন ঝাড়ু।

শেষ দিনে দামও খুব একটা বেশি ছিল না। বিক্রেতারা প্রথমে দাম বেশি হাঁকালেও পরে দর কষাকষি করে ন্যায্য দামে কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা। ফিরিয়ে নেয়ার চাইতে কম লাভে ছাড়াই ভালএ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন দোকানিরা।

মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বলী খেলা ও মেলা শেষ করতে পেরেছি। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘চরের মাটি কেটে পাচারের সময়’ উল্টে গেল ট্রাক, চালক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধচলন্ত কারে আগুন, রক্ষা পেলেন ডাক্তার সাংবাদিকসহ ৪ জন