কোকিলের কুহুকুহু ডাকে মুগ্ধ সকাল

সুলতানা কাজী | শুক্রবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

সাত সকালে ঘুম তাড়ানোর অভ্যেস আমার। কুয়াশা জড়ানো সকালে এতোদিন চারদিক ধোঁয়াশে ঠেকতো! আজ খেয়াল করলাম, খুব সকালেই বাসার সামনের গাছে, পাখিদের গুঞ্জন! বুঝলাম, শীত ল্যাজ গুটাতে ব্যস্ত এখন! দুয়ারে বসন্ত! ‘আকাশে বহিছে প্রেম,/ নয়নে লাগিল নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছে! / বসন্ত এসে গেছে। দখিনা বাতাস। চারপাশে ফুটছে ফুল। পুলকিত মন, উচ্ছ্বাস ভরা ক্ষণ। গা টান ধরা মৃদু ঠাণ্ডা। শীতের উপসংহার!

চোখ বুঁজেই অনুভব করছি এসব! প্রকৃতি সেজেছে নবরূপে। জীর্ণতাকে পিছে ফেলে শুরু হতে চললো বসন্তের আগমন। সবুজ পত্রপল্লবের আবডালে বসন্তের দূত কোকিলের কুহুকুহু ডাকে মুগ্ধ সকলে। আহা! বসন্ত আসলো বলে! নেই কোথাও হসন্ত আর! বসন্ত আর ভালোবাসা একই সূত্রে গাঁথা যেনো। পাখিরা প্রণয়ীর খোঁজে বের হয়, ঘর বাঁধে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়! এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছোটে। এমনই এক মধুর ঋতু বসন্ত! আসলেই বিশেষ! বসন্ত! তুমি ভালোবাসা যেমন শিখিয়েছো, তেমনই বাঙালিকে প্রিয় ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামেও লিপ্ত করেছো। ১৯৫২ সালের এমনই এক বসন্তের দিনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো নাম না জানা অসংখ্য শহিদের রক্তের বিনিময়ে, বাঙালিরা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে নিজেদের অস্তিত্বের এবং গৌরবের অলংকার হিসেবে পেয়েছিল। অনিঃশেষ সালাম, শ্রদ্ধা সেসব বীর শহীদদের প্রতি। ঋতুরাজ বসন্ত তাই আমাদের আবেগ, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশেরও এক বিশেষ ঋতু। বসন্ত আমাদের কাছে চিরায়ত প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহনও।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তে অনেক ফুলের সমাহার দেখে বিস্মিত হয়ে সেই কবে লিখে গেছেন– ‘আহা! আজি এ বসন্তে / কত ফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে। বিরহের কবি’ নজরুল প্রকৃতিতে আসা বসন্তক্ষণকে পৃথিবীর স্বর্গ বলে অভিহিত করেছেন। কবির ছন্দময় সুরে বিমোহিত হয়ে গানের এই পাখিগুলোই পৃথিবীতে সন্ধান এনে দেয় বসন্ত নামক স্বর্গ। তিনি লিখেছেন– ‘ফুটলো যেদিন ফাল্‌গুনে হায়,প্রথম গোলাপ কুঁড়ি’। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসন্ত উপলব্ধি করেছেন এভাবে. ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত’। আসলেই, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক।

বসন্ত আমাদের হাসায়, নতুন করে সাজতে শেখায়, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায় সবসময়। ফাগুনের আগুন, মনের ক্লান্তি, ঘৃণা, জড়তা দূর করে ভালোবাসাকে আরো বেশি রঙিন করে তোলে। তাই বিবর্ণতা নয়, রঙের পথেই হোক আমাদের উত্তরণ। সকল কুসংস্কারকে দূর করে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দুর্নিবার প্রচেষ্টার বার্তা আসে বসন্ত থেকে। জীবনটাকে পুরোটাই বসন্ত ভেবে, অসুন্দরের পায়ে শেকল বেঁধে এগিয়ে চলায়ই হোক বসন্তের লক্ষ্য। এগিয়ে চলি সামনে যাওয়ার জন্য নয় শুধু! ভবিষ্যত পৃথিবীর উদাহরণ হওয়ার জন্যই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ কাট্টলী ১১নং ওয়ার্ড কলেজ রোডের সংস্কার করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধসাহিত্যের প্রস্রবন স্থান