কুৎসিত হাঁস

নূরনাহার নিপা | বুধবার , ৯ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

সেই দিনটি ছিলো খুব সুন্দর। আনন্দঘন ছিলো নিসিদ্ধপুর। নির্জনে পাহাড়ের নিচে জলাধারে পাশে গাছের নিচে নিরাপদ স্থানে মা হাঁসটা জায়গা খুঁজে নিলো ডিম পাড়ার জন্য। পাঁচ দিনে বেশ বড় বড় পাঁচটা ডিম পাড়লো। অবশেষে সুন্দর ভোরে ডিম গুলো ফুটলো। একটা একটা করে ফুটে হঠাৎ “মা হাঁসটি দেখে সবকটি ডিম ফুটে একটা ডিম ছাড়া। মা হাঁসটি খুবই চিন্তায় পড়ে গেলো। একটি ডিম কেন ফুটলো না। এই ডিমটি ফুটতে অনেক সময় নিচ্ছে।
সদ্য ফোটা হাঁসের বাচ্চা গুলো বিশাল দুনিয়াতে চোখ খুলল, প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকছে? মা হাঁসটি বললো- আহ্‌ আমার বাচ্চাগুলো কত সুন্দর হয়ছে। আমি অনেক ভাগ্যবতী। বাকি ডিমটায় যে বাচ্চাটি ফুটবে এটা হয়ত আমার সব চেয়ে সুন্দর বাচ্চা হবে।
মা হাঁসটি আবার খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। আবার না ফুটা ডিমটির উপর বসলো তাপ দিতে লাগলো। অবশেষে ডিমটা ফুটলো । একটা ঘটনা ঘটে গেলো সদ্য ফুটা পাঁচ নম্বর হাঁসের বাচ্চাটি দেখতে একেবারে কুৎসিত হলো। মা হাঁসটি মনে খুব ‘কষ্ট পেলো। বললো আমার বাকি একটা বাচ্চা ও এমন নয়।
বাচ্চাটা দেখতে এতই কুৎসিত যে অন্য ভাইবোনদের থেকে সে একেবারেই আলাদা। মা হাঁসটি চিন্তিত, মা হাঁসটি ভাবলো!
সে একদিন না একদিন অন্যবাচ্চা গুলোর মতো হয়ে যাবে। দিন পেরিয়ে যায়। বাচ্চাটা কুৎসিতই থেকে গেলো। এই বাচ্চাটির সাথে তার অন্য ভাইবোনরা একদম মিশতো না। খেলতো না। তারা তাকে দেখে হাসতো! তাকে দেখে অনেক মজা করতো? সে যেন তাদের ভাইই না।
তারা বলতো- তুই খুব কুৎসিত দুনিয়াতে তুই একটা বিশ্রী দত্যি, তুই দেখতে বাজে, তোর সাথে আমরা খেলবো না। তখন কুৎসিত হাঁসটির খুব কষ্ট হতো? একদিন সে অনেক অভিমান করে এখান থেকে পালিয়ে গেলো। কুৎসিত হাঁসটা নিজের মতো করে ভাবলো। পুকুর ঘাটে গেলো।
নিজের চেহারা জলে দেখলো। তাকে কেন কেউ পছন্দ করে না তা নিজের চোখে নিজে দেখতে চায়।
তারপর সে ভাবলো এই নিসিদ্ধপুর ছেড়ে সে অনেক দূরে চলে যাবে। এখানে আর ফিরবে না। এখানে তার আপন কেউ নেই। সবাই তাকে ঘৃণা করে। সে নিসিদ্ধপুর ছেড়ে
গভীর জঙ্গলে একা একা হাঁটতে লাগলো। গভীর জঙ্গলে অনেক ঠান্ডা। ঠান্ডায় সে কাঁপতে লাগলো। এর মধ্যে তার খুব খিদে পায়। কোথায়ও কোন খাবার পেলো না। ঠান্ডায় তার কাঁপন ধরে যায়।
থাকার মতো কোন জায়গাও পেলো না। এই ঠান্ডায় সে কোথায় যাবে! গভীর জঙ্গলে সে একটা হাঁসের সন্ধান পেলো। সে তার বাসায় গেলো। সেও তাকে ঠাঁই দিলো না। সে বলে তুমি খুব কুৎসিত! আমার ভয় হয়। যাও বাবা আমার এখানে তোমার থাকা হবে না।
তারপর সে জঙ্গলী মুরগীর বাসায় গেলো থাকতে। সেখানেও তাকে থাকতে দিলো না। মুরগী ঠোঁট দিয়ে খোঁচা দিয়ে বের করে দিলো।
তারপর রাস্তায় দেখা হলো পথে কুকুরের সাথে। কুকুর বললো বাপু তুমি খুব কুৎসিত আমার কাছে তোমার জায়গা হবে না। কুৎসিত হাঁসটি বললো-আমি এতো বাজে দেখতে আমাকে কুকুর ও থাকতে দিলো না!
তারপর মনের দুঃখে সে গভীর জঙ্গলে আনমনে হাঁটতে লাগলো।
পথে দেখা হলো এক পাহাড়ী জুমচাষীর সাথে। চাষী তাকে ঘরে নিয়ে গেলো তার বউ বাচ্চাদের কাছে। সেখানেও বিড়াল বিরক্ত করতে লাগলো? চাষীর ঘর থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে লাগলো।
এরপর এলো বসন্তকাল। চারদিকে ফুলে ফুলে ভরে গেল। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ী নদে গেলো। অনেক জল দেখতে পেয়ে কুৎসিত হাঁসটির মন ভরে গেলো খুশিতে। হঠাৎ কুৎসিত হাঁসটি দেখতে পেলো একটা সুন্দরী রাজহাঁস সাঁতার কাটছে নদে। তাকে দেখে কুৎসিত হাঁসটির খুব ভালো লেগে গেলো।
সুন্দরী রাজহাঁসটি নদীতে স্নান করছে। সে অনেক সুন্দরী। কুৎসিত হাঁসটি এতক্ষণে বুঝতে পারলো কেন সে তার ভাইবোনদের থেকে থেকে আলাদা হলো। তার ভাইবোনরা ছিলো পাতিহাঁস, আর সে ছিলো রাজহাঁস। এখন যাকে তার ভালো লাগছে সে রাজহাঁস। অবশেষে সে আর রাজহাঁস বন্ধু হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে তাড়নায় ইউক্রেন যুদ্ধে নাম লেখাচ্ছেন বিদেশিরা
পরবর্তী নিবন্ধবাধা আর নেই