কিসের এতো তাড়া

ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে বিপদ দেখছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

কিসের এতো তাড়া? প্রশ্ন ছিল টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দেখে এমনই প্রতিক্রিয়া ছিল তার কণ্ঠে। যেখানে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ধীর-স্থির-সাবধানী ব্যাটিং, সেখানে আগ্রাসী ক্রিকেটের নেশায় স্বাগতিকরা ছুঁড়ে আসেন একের পর এক উইকেট। তাদের আউটের ধরন মানতেই পারছেন না টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ।
টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিনে এসে ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের সামনে শঙ্কা এসে হাজির হয়েছে। বৃষ্টির সুবাদে ড্র করার আশাও এখন যায় যায় অবস্থা। চার দিন মিলিয়ে যে ম্যাচে ওভারের হিসেবে খেলা হয়েছে দেড় দিনেরও কম, সেই ম্যাচেও হারার ক্ষেত্র তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ যে ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখাল, এক কথায় সেটি অবিশ্বাস্য। শাহিন শাহ আফ্রিদির পেস এবং সাজিদ খান ও নুমান আলির স্পিন খেলতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাগতিকরা। বলতে গেলে, লড়াই করার চেষ্টাই করলেন না কেউ। যেন মেতে উঠলেন বাজে শট খেলা আর উইকেট বিলিয়ে আসার উৎসবে। তাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ভীষণ বিপদে টাইগাররা।
চতুর্থ দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৭৬। তিন চারে ২৩ রানে খেলছেন সাকিব আল হাসান। ১০ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তাইজুল ইসলাম। ফলোঅন এড়াতে এখনও ২৫ রান চাই স্বাগতিকদের। সাকিব টিকে থাকায় পাকিস্তানকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠানোর আশা হয়ত করা যেতে পারে। তবে ম্যাচ বাঁচাতে সেটা কতটা ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়িয়েছে মঙ্গলবারের শেষ বেলার ব্যাটিং। বাংলাদেশের সাত উইকেটের ছয়টিই নিয়েছেন অফ স্পিনার সাজিদ, ৩৫ রানে। অন্যটি রান আউট। বাবর আজম, আজহার আলি, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলমের ফিফটিতে ৪ উইকেটে ৩০০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। বাংলাদেশের উল্টো পথে যাওয়ার শুরু মাহমুদুল হাসান জয়ের বিদায়ে। কোন রান করতে পারেননি তিনি। আরেক ওপেনার সাদমান বাড়তি লাফানো বলে ক্যাচিং অনুশীলন করান পয়েন্টে। নড়বড়ে শুরু করা বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেয় মোমিনুলের আত্মঘাতী রান আউট। ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেলের চেষ্টায় সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি জায়গায়। হাসান আলির সরাসরি থ্রো ফেলে দেয় বেলস। চা-বিরতির আগে সেটাই ছিল শেষ ওভার।
দ্বিতীয় সেশনে ১০.১ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের অবস্থা আরও মলিন হয় তৃতীয় সেশনে। এক দিকে নিয়মিত পড়ছিল উইকেট, আরেক দিকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত খেলছিলেন শট। পাকিস্তানের একটা রিভিউ থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া মুশফিকুর রহিম স্লগ করতে গিয়ে বিলিয়ে আসেন উইকেট। বিস্ময়করভাবে সেই ওভারেই ওই একই শটে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন লিটন দাস। নুমান আলির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে অনেকটা মরিয়া চেষ্টা হিসেবে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ভাগ্য ভালো, সেটি ছিল ‘নো’ বল। তাই বেঁচে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নয়তো ফিরে যেতে হতো। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল। মুশফিকের আউট থেকেও কিছু শেখেননি লিটন। বেরিয়ে এসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে শট খেলার চেষ্টায় এই কিপার-ব্যাটসম্যান দেন ফিরতি ক্যাচ।
এক দশক পর সাতে নামা সাকিব রান আউট হয়ে ফিরতে পারতেন ৭ রানে। তার ভাগ্য ভালো স্টাম্পে লাগেনি সাজিদের থ্রো। বারবার কোনোমতে বেঁচে যাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত থামেন এলবিডব্লিউ হয়ে। তাকে বিদায় করে ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান সাজিদ। ৫০ বলে তিন চারে ৩০ রান করে আউট হন শান্ত। আটে নেমে সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। সাজিদের অফ স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে স্লগ সুইপের মতো করার চেষ্টা করেন তিনি। ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। বল টার্ন করে ছোবল দেয় স্টাম্পে। তাইজুলকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব। মিরপুর টেস্টে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনা বাংলাদেশের সামনে এখন ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্যের ছায়া অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক
পরবর্তী নিবন্ধবেগম রোকেয়া পদক পাচ্ছেন প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া