স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর আর নেই। করোনার কাছে হেরে গেলেন এই প্রথিতযশা শিল্পী। ফকির আলমগীর শুক্রবার রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)। তাঁর মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এই বরেণ্য শিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ড. ইউনূস।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদ প্রাঙ্গনে ফকির আলমগীরের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফকির আলমগীরের মরদেহ নেয়া হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি শুরু হয়।
দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাদ জোহর খিলগাঁও মাটির মসজিদ প্রাঙ্গণে। এরপর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। ফকির আলমগীর কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
ফকির আলমগীর ষাটের দশক থেকে সংগীত চর্চা করেছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি বাঁশীবাদক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে যোগ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও গণশিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। গণঅভ্যুত্থান, ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী গণআন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তার গান দিয়ে। ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দ সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ফকির আলমগীরের গাওয়া ‘ও সখিনা’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এ ছাড়া তার গাওয়া ‘কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’সহ বেশ কিছু গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।