এলপিজিএলে নিয়মে আসছে ভোক্তার গ্যাস

বোর্ড সভায় উপস্থাপনের জন্য এলপিজিএলকে বিপিসির চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডে (এলপিজিএল) অবশেষে নিয়মে আসছে ভোক্তা পর্যায়ের গ্যাস বিক্রি। ইতোমধ্যে বিপিসির পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি বোর্ড সভায় উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিপিসি চেয়ারম্যান। এনিয়ে এলপিজিএলকে চিঠি দিয়েছে বিপিসি। আগামী ৯ নভেম্বর বোর্ড সভা অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত রয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে, দীর্ঘদিন থেকে এক পরিবারে দুই বোতল গ্যাসের স্থলে দেওয়া হবে সাড়ে ১২ কেজির এক বোতল গ্যাস। পুরোনো তালিকা বাদ দিয়ে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা তৈরির সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুলাই দৈনিক আজাদীতে ‘৫৯১ টাকার গ্যাস গেট পার হলেই ৮৫০; এলপি গ্যাস লিমিটেড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় বিপিসিতে। নড়েচড়ে বসে দেশে রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, দৈনিক আজাদীতে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবকালীন সর্বশেষ কঠোর লকডাউন শুরু হলে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি বন্ধ করে দেয় এলপিজিএল। পরবর্তীতে গত ১৩ আগস্ট থেকে পুনরায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি শুরু হলেও গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সভার নির্দেশনা মোতাবেক ২৬ আগস্ট থেকে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি। বোর্ড সভায় বিপিসি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাস বিক্রয়ের বিষয়টি কোম্পানির জন্য কতটুকু লাভজনক, ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালন করা সম্ভব কিনা, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিপিসির পরিচালক (বিপণন) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেন বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ। এ নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর এলপিজিএলকে চিঠি দেয় বিপিসি।
বিপিসির গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, প্রতিমাসে দুইটি সিলিন্ডারের পরিবর্তে পরিবারপ্রতি মাসে ১টি সিলিন্ডার বিক্রি করা, বিদ্যমান তালিকা বাদ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে প্রকৃত ভোক্তা তালিকা প্রণয়ন করা, ভোক্তার তথ্য ও ডাটাবেইজ সংরক্ষণের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা, খোলা বাজারে বিক্রি রোধে ভোক্তা পর্যায়ের সিলিন্ডারে আলাদা রং ও সিল সম্বলিত সিলিন্ডার প্রস্তুত করা এবং এলপিজিএল, বিপিসি ও বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোক্তা পর্যায়ে সরাসরি ক্রয়ের সুবিধা বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া সরকারি পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজারে এলপিজিএলের অংশগ্রহণ বাড়াতে নতুন প্লান্ট স্থাপনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এদিকে গত ৬ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১১ জুলাই বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বন্টন ও বিপণন) মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়টি বিশ্লেষণপূর্বক জরুরি ভিত্তিতে বস্তুনিষ্ঠ মতামত ও সুপারিশ প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়ে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পত্র দেন। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, ভোক্তাদের কাছে ৫৯১ টাকায় বিক্রি করা গ্যাস গেট পার হলেই সিন্ডিকেট সদস্যরা বেশি দামে কিনে নিচ্ছেন। এতে ভোক্তা কার্ডধারীরা সিলিন্ডারপ্রতি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা পান। ভোক্তা পর্যায়ের গ্যাস বিপণনে অসাধু কয়েকজন শ্রমিকও জড়িত।
এ বিষয়ে এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু হানিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এলপিজিএলের ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রতিবেদনটি পরবর্তী পর্ষদ সভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ৯ নভেম্বর পর্ষদ সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওইদিন প্রতিবেদনটি পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসামাজিক আন্দোলনই রুখবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু