একটি ব্যাগ, কাটা মাথা ও একজন আনারকলির কথা

ঋত্বিক নয়ন | বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

বিবেকের দংশনে জর্জরিত ২০ বছর বয়সী গৃহবধূ আনারকলি। সংসার বাঁচাতে গিয়ে আজ তিনি খুনের মামলার আসামি। এজন্য নিজের কপালকেই দোষারোপ করেন। পতেঙ্গা সৈকতে পিবিআই টিমের সাথে তার শ্বশুর হাসান আলীর কাটা মাথা খোঁজার ফাঁকে আনারকলি আজাদীকে বলে, ছোট থেকে ভাগ্য আমার সাথে পরিহাস করে এসেছে সবসময়। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল। কিন্তু পরক্ষণে মনে হয় একদিন মানুষের মতো মানুষ হয়ে নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে নেব।

আনারকলি বলেন, স্কুলে প্রতিটি পরীক্ষায় কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হইনি। পিএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলাম। সেই রেজাল্টের কারণে একটা সুন্দর স্কুলব্যাগ দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। এত বছর যত্ন করে সেটি আগলে রেখেছিলাম। যে ব্যাগে সবসময় বই থাকত, সেই ব্যাগেই কিনা শ্বশুরের কাটা মাথা ভরা হয়েছিল বিচে ফেলে দেওয়ার জন্য। আমার স্বামী মাথাটা ফেললেও ব্যাগটা ফেলতে দিইনি। কারণ ব্যাগটা জড়িয়ে আমার যে অনেক স্মৃতি!

পিবিআই কার্যালয়ে আনারকলি গত সোমবার রাতে আজাদীকে জানান, আমি স্যারকে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইলিয়াস) কয়েকটা কথা বলেছি। কথাগুলো আপনাকেও বলি। প্রথমত আমি মিথ্যা যে একেবারে বলি না, তা নয়। তবে সবসময় সত্য বলার চেষ্টা করি। আমি আমার মাকে বলেছি, আমার যদি সাজা হয়, তবে যেন আমার ছেলেটাকে কখনো জেলখানায় না আনে। কারণ আমি চাই না আমার সন্তান জানুক, তার মা একজন খুনের আসামি। আমি নিজে দেখেছি, খুনির সন্তান হওয়ার কী জ্বালা। আমার বাবাও ছিলেন খুনের আসামি। বিশ বছর সাজা হয়েছে। পাঁচ বছর সাজা খেটে বের হয়েছেন। আমি আইও স্যারকে বলেছি, আমাকে যেন জামিন দেওয়া না হয়। কারণ জামিন দিলে আমার হাজিরা দিতে হবে। হাজিরা দেওয়ার টাকা আমার কাছে নেই।

তার এ বক্তব্যের সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইলিয়াস আজাদীকে বলেন, সে খুব মেধাবী। তার ব্যাগটা নিয়ে তার যে ফেসিনেশন, সেটা সত্য। তার স্বামী ব্যাগটা ফেলে দিতে বললেও সে সেটা নিয়ে এসে তাকের ওপর রেখে দেয়। সেখান থেকেই সেটি আমাদের নামিয়ে দেয়। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম জাহাঙ্গীরের কাছে ফিরে যাবে কিনা। সে বলেছে, কখনোই যাব না। আমি জেল থেকে বের হয়ে আপনার কাছে আসব। আমাকে একটা চাকরি দেবেন, যাতে ছেলেকে মানুষ করতে পারি। কারণ সে এত মেধাবী হয়েও শুধুমাত্র টাকার অভাবে ক্লাস এইটের পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি। জাহাঙ্গীরকে বিয়ে প্রসঙ্গে আনারকলি বলেন, ২৪ ঘণ্টার পরিচয়ে তাকে বিয়ে করি, শুধুমাত্র শহরে থাকব এই আশায়।

খুনের প্রসঙ্গে আনারকলি বলেন, নিজের শ্বশুরকে স্বামী ও ভাসুর মিলে খণ্ডবিখণ্ড করতে দেখেও চুপ ছিলাম সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয়ে। কারণ এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রথম বিয়ে দেয় পরিবার। সংসার কী বোঝার আগেই প্রথম স্বামীর নির্যাতনে আর সংসার করা হয়নি। ১৯ বছর বয়সে জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করে দ্বিতীয় সংসারে প্রবেশ। দ্বিতীয় সংসারে এমন নৃশংস ঘটনা দেখেও যদি মুখ খোলেন, তবে স্বামী হুমকি দিয়েছিলেন তালাক দেওয়ার। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছেও বলেছেন, ‘সংসার’ নামের আবেগের কারণে বিবেক বিসর্জন দেওয়ার কথা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্টোবরে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর সম্ভাবনা নেই
পরবর্তী নিবন্ধআর চিন্তা নেই, তলে তলে আপস হয়ে গেছে : কাদের