ঈদের লম্বা ছুটিতে রেকর্ড পর্যটক সমাগম ঘটেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। জমজমাট হয়ে উঠেছে সব পর্যটনকেন্দ্র। গত ১১ দিনে প্রায় আট লাখ পর্যটক শহরের হোটেল–মোটেল ও কটেজে উঠেছে। প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ঈদের ছুটিতে পাহাড়েও ঢল নেমেছে ভ্রমণপিপাসুদের। পর্যটকেরা ভিড় করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোতে। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, সৈকত ও লেকে ব্যাপক সমাগম ছিল পর্যটকদের।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, পর্যটকেরা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী পাথুরে সৈকত, পাটোয়ারটেক, টেকনাফ জিরো পয়েন্ট সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এবং মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে ঘুরেছেন। ভালো ব্যবসা করেছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তবে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও করেছেন পর্যটকরা। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিসংখ্যান মতে, গত ১১ দিনে প্রায় আট লাখ পর্যটক হোটেল–মোটেল ও কটেজে উঠেছে। অবশিষ্ট পর্যটকরা বিভিন্ন বাসা–বাড়ি, সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাস ও তাবুতে রাত্রী যাপন করেছেন। অনেক পর্যটক দিনে এসে দিনে ফিরে গেছেন। আবার একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক হোটেল কক্ষ না পেয়ে রাস্তা, সমুদ্র সৈকতে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছেন। চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিজন পর্যটকের দৈনিক গড়ে প্রায় সাত হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এতে ঈদের পরের দিনগুলোতে দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মিলে সর্বমোট প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল–মোটেল গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদের ছুটিটা ব্যতিক্রম হয়েছে। সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা ১১ দিনের লম্বা এক ছুটি। ২৬ মার্চ থেকে পর্যটকের আগমণ হতে থাকে। ঈদের দিন থেকে সব শ্রেণীর পর্যটক এসেছেন। এতে শনিবার (আজ) পর্যন্ত কলাতলী হোটেল–মোটেল জোন ও মেরিন ড্রাইভ সড়কের সব হোটেল ও কটেজ শতভাগ কক্ষ বুকিং ছিলো। এতে সব স্তরের হোটেল ও কটেজে ভালো ব্যবসা হয়েছে। জেলা রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সহসভাপতি কামরুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন সব রেস্টুরেন্টে বেচাকেনা বেশ হয়েছে।
তবে পর্যটকদের অভিযোগ, বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমণকে পুঁজি করে হোটেল কক্ষ ও রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত দাম নেয়া হয়েছে। ২০০০ টাকার কক্ষ ৫০০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। একইভাবে বহু রেস্টুরেন্ট হাতিয়ে নিয়েছে দিগুণ দাম। রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবুও ইভিটিজিং, ছিনতাইসহ কয়েকটি অঘটন ও দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সমুদ্র সৈকতে দোলনা ছিঁড়ে অন্তত ৩০ জন পর্যটক আহত হয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, এত বিপুল সংখ্যক পর্যটকের চাপে হিমশিম খেতে হয়েছে। তারপরও আমাদের সদস্যরা নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি রাখেনি। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অঘটন ঘটেনি।
বান্দরবান : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে। জেলা শহরের হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে রুম খালি না পেয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন পর্যটকেরা। চাপ সামলাতে রাত্রী যাপনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুলে দেয়া হয় জেলা স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নও।
জেলা সদরের নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, ডাবল হেন্ডস ভিউ, টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, বুড্ডিস্ট ট্যাম্পল’সহ পর্যটন স্পটগুলোতে উপচে পড়ে ভিড় ছিল। অনেকেই ছুটে গেছেন দেবতাখুম’সহ দূর–দূরান্তের পাহাড়–পর্বতে। পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামলাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অধিকাংশ রিসোর্টে আগামী ৯ তারিখ পর্যন্ত সবগুলো রুম বুকিং রয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন জেলা বান্দরবান। হোটেল, মোটেল রিসোর্টগুলোও পরিপূর্ণ থাকায় পর্যটকদের সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়ন পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়েছিল। ঈদের লম্বা ছুটিতে বান্দরবান ভ্রমণে আগাম রুম বুকিং নিশ্চিত করে বেড়াতে আসার জন্য পর্যটকদের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে পর্যটক সমাগম। ঈদের প্রথম দিন থেকেই আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরনা সবখানেই পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। পরিবার স্বজন বন্ধুদের নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকেরা। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তারা।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, প্রতিদিনই কয়েক হাজার পর্যটক আলুটিলা ভ্রমণ করছে। খাগড়াছড়ি টুরিস্ট পুলিশের উপ–সহকারী পুলিশ পরিদর্শক নিশাদ রায় বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি রাখা হয়েছে পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম।
পারকি সমুদ্র সৈকত : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে পারকি সমুদ্র সৈকত। ঈদের দিন থেকে শুরু করে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৫ দিনে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক সমাগম হয়েছে সৈকতে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন অনেকে।
তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি না হওয়ায় দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তির পাশাপাশি সৈকতের বালু চরে অবৈধ বাইকারের উৎপাতে পর্যটকদের অবাধ চলাচলে নানান প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া সৈকতে অবকাঠামোগত উন্নতি না হওয়ায় রাত যাপনের সুযোগ হয়নি দূর–দূরান্তের দর্শনার্থীদের। কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাতও পর্যটকদের অস্বস্তিতে ফেলেছে।
পারকি বিচ এলাকায় দায়িত্বরত বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মহসিন জানান, আমরা বিচের সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছি। সৈকতের আইনশৃক্সখলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে।
মহামায়া লেক : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, ঈদের ছুটিতে কয়েকদিন ধরে পর্যটকের পদচারণায় মুখর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া ইকোপার্ক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী পর্যটকের আনাগোনায় ব্যস্ততা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের।
মহামায়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের ইজারাদার মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা রয়েছে এখানে। থাকা–খাওয়ার জন্য রয়েছে উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুরো পার্ক সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।