আলোয় ঢেকে যাচ্ছে রাতের আকাশের তারা

| রবিবার , ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

মানুষের চোখের সামনে থেকেই রাতের আকাশ থেকে বিভিন্ন নক্ষত্র হারিয়ে যাচ্ছে। এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন জোতির্বিদরা। নতুন এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বছর রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর মানে, এক সময় দৃশ্যমান ছিল এমন বিশাল সংখ্যক তারা এখন জোতির্বিদ ও মানুষের দৃষ্টিতে রয়ে যাচ্ছে ‘আলোর আড়ালে’। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো শিশু আকাশে থাকা আড়াইশ তারার অধীনে জন্ম নিলে নিজের ১৮তম জন্মদিনে তিনি কেবল একশটি তারা দেখতে পাবেন। বিভিন্ন তারা অবরুদ্ধ করা এই আলোক দূষণের মাত্রা মানুষের ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এমনকি এটি কমিয়ে আনার প্রচেষ্টার পরও। আর কেবল রাতের আকাশের দৃশ্য নয়, বরং পরিবেশ, প্রাণিকূল ও মানুষের জৈবিক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়াদির ওপরও প্রভাব ফেলায় এটি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। খবর বিডিনিউজের। ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ‘নাগরিক বিজ্ঞানী’দের ৫০ হাজারেরও বেশি বিশ্লেষণ ছিল এই গবেষণার অংশ। এর লক্ষ্য ছিল, ‘আকাশের আলো’ সংশ্লিষ্ট সমস্যার মাত্রা বা মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে তৈরি রাতের আকাশে বিচ্ছুরিত আলোর বিষয়টি পুরোপুরি বোঝা।

এখন পর্যন্ত আকাশের উজ্জ্বলতা পরিবর্তনের বিষয়টি খুব কমই নথিভুক্ত করা হয়েছে কারণ গোটা বিশ্ব থেকে তথ্য সংগ্রহের সহজ কোনো উপায় নেই। ওই বিষয়টি সুরাহা করতে বিজ্ঞানীরা এমন এক অ্যাপের সহায়তা নিয়েছেন, যা গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো একত্র করে। এইসব তথ্য খালি চোখে সীমাবদ্ধ মাত্রার ডেটা সংগ্রহেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি আকাশের কোনো বস্তুর ন্যূনতম উজ্জ্বলতাও পরিমাপ করতে পারে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষণের কারণে রাতের আকাশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় ওইসব বস্তু দেখতে চাইলে সেগুলোকে আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল হতে হবে। অন্যথায়, এগুলো রাতের আকাশ থেকে হারিয়ে যাবে।

এইসব পরিমাপ থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রতি বছর রাতের আকাশের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় নয় দশমিক ছয় শতাংশ। এর আগে বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত অনুমানে উঠে এসেছে, এই উজ্জ্বলতা কেবল দুই শতাংশ বেড়েছে। এই সমস্যার মাত্রা অনুমানে বিভিন্ন স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হলেও গোটা পৃথিবীতে এমন কোনো পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা নেই, যা মানুষের আকাশ দেখার ধরন হিসাব করতে পারে।

জানালা থেকে অনুভূমিকভাবে বের হওয়া আলো পরিমাপের সম্ভাবনাও কম। তবে, ওইসব উৎস ভূপৃষ্ঠে থাকা মানুষের মাধ্যমে ঘটিত আলোক দূষণের বেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ অনুসন্ধান নিয়ে ‘সিটিজেন সায়েটিস্টস রিপোর্ট গ্লোবাল র‌্যাপিড রিডাকশনস ইন দ্য ভিজিবিলিটি অফ স্টারস ফ্রম ২০১১ টু ২০২২’ শিরোনামের নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’এ।

গবেষণাপত্রের উপসংহারে গবেষকরা নাগরিক বিজ্ঞানীদের এই ধরনের তথ্য প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তারা এটিও বলেন, এইসব তথ্য কেবল নীতিনির্ধারকদেরই ব্যবহার করা উচিত। আর এই সমস্যা নিরসনে নেওয়া পদক্ষেপগুলোতেও কোনো ফলাফল মিলছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরল ইউএফও মেঘে দৃষ্টিবিভ্রম
পরবর্তী নিবন্ধগাড়ির সিটবেল্ট না বাঁধায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর জরিমানা