আর কোনো রোহিঙ্গাকে নেব না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সীমান্তের ঘটনা আসিয়ান নেতাদের জানাল বাংলাদেশ

| মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে নতুন করে সংঘাতে আরও শরণার্থী আসার ক্ষেত্র তৈরি করলেও নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে না দেওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। খবর বিডিনিউজের। তিনি গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কাউকে আর ঢুকতে দেব না। যে পরিমাণ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে রয়েছে, আমরা নিজেরাই এখন তাদের নিয়ে নানা ধরনের জটিলতায় রয়েছি। তাই আর কোনো রোহিঙ্গাকে আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেব না। মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে মুসলিম রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। ২০১৭ সালের আগে এই সংখ্যা চার লাখের মতো ছিল। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযান শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কঙবাজারে শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর ভার বহন কষ্টকর হয়ে ওঠার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এর মধ্যেই গত অগাস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘাত বেঁধেছে রাখাইন প্রদেশে। ফলে আবারও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় খুঁজতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে- সোমবার পুলিশের বিশেষায়িত অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পেয়ে তা জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা মনে করি, মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য নানান ধরনের যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। এটা তাদের নিজেদের সমস্যার জন্য, আমরা এখনও সঠিকভাবে জানি না, তারা কার সঙ্গে গোলাগুলি করছে। কিংবা কাকে তারা প্রতিহত করছে। আমরা যেটুকু শুনেছি, আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের (মিয়ানমার) বিরোধ। সেই বিরোধের জের ধরেই তারা গোলাগুলি করছে।
মিয়ানমারের এই সংঘাতের বলি সীমান্তের বাংলাদেশিরাও হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে গোলা এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভেতরে। তাতে এখন অবধি একজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এজন্য মিয়ানমারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। তাদের অ্যাম্বাসেডরকে তলব করে তার কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রতিবাদে কাজ না হলে জাতিসংঘেও তা তোলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি প্রতিবাদেও কাজ না হয়, তাহলে আমাদের জাতিসংঘ রয়েছে, সেখানে আমরা আমাদের অসুবিধার কথা উত্থাপন করব। তবে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ দেশ। শান্তি বিঘ্নিত হোক, তা চাই না। আমরা সবসময় শান্তিতে থাকতে চাই।
আসিয়ান দূতদের ডেকে অবস্থান জানাল বাংলাদেশ : সীমান্তে মিয়ানমারের মুর্হুমুর্হূ গুলি এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশিদের হতাহতের ঘটনায় ঢাকার অবস্থান আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মিশন প্রধানদের জানিয়েছে সরকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানকারী এসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের ডেকে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম। মিয়ানমারের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনাররা এতে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল উড়ে আসা ও বিস্ফোরণ, বিচ্ছিন্ন গোলাগুলি, হতাহতের ঘটনা এবং সীমান্তে এলাকায় মানুষের সম্পত্তি ও জীবিকা ধ্বংসের বিষয়ে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের কথা দূতদের কাছে তুলে ধরেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রদূতরা ভারপ্রাপ্ত সচিবকে নিশ্চিত করেছেন, তারা বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় জেনেছেন এবং নিজেদের রাজধানীতে সেই বার্তা পৌঁছে দেবেন।
আসিয়ানের মিশন প্রধানদের কাছ থেকে সংঘাত নিরসনের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেছে- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা বলেছেন, এগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সঙ্গে বাংলাদেশ কোনোভাবে সম্পৃক্ত না। বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করে তারা এক্ষেত্রে যথাসম্ভব সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘রাতে ঘুমেও গুলির শব্দ শুনি’
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা