আমদানি কমাতে মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদন করতে হবে

রাবার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

বিদেশ থেকে আমদানি কমাতে দেশে মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ রাবার বোর্ডকে দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বলেন, রাবার শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না। সবাইকে একসাথে বসে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। গতকাল বিকেলে নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত ‘প্রাকৃতিক রাবার ও রাবারভিত্তিক শিল্পপণ্য মেলা’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার রাবার ও রাবারভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও প্রসারে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় অর্থনীতিতে রাবার শিল্পের অবদান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতের উন্নয়ন হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেমন উপকৃত হবে, তেমনি বেকার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করবে। রাবার চাষের মাধ্যমে নারী-পুরুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান সম্ভব। বাগানের গাছের পরিচর্যা, টেপিং, ল্যাটেক্স হতে রাবার শিট তৈরি করার কাজে ফ্যাক্টরিতে পাহাড়ি-বাঙালি নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সম্ভব।
রাবার বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি মন্ত্রী বলেন, আপনারা রাবার শিল্প মালিক সমিতি, বাগান মালিক সমিতি, বিএফআইডিসি, এনবিআর, ট্যারিফ প্রতিনিধিকে ডাকেন, সেমিনার করেন। স্টেকহোল্ডাররা পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করে লাভ হবে না। সেমিনারে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি এত এত সমস্যার সমাধান করতে পারেন, আপনারা একটা ক্ষুদ্র সমস্যার সমাধান করতে পারেন না কেন? আপনি যদি ভাবেন, সমাধান হয়ে গেলে তো আমাদের কোনো লাভ হবে না, তাহলে অন্য কথা। এজন্যই সম্ভবত অনেকে সমাধান চায় না।
তিনি আরো বলেন, আপনারা রাবার বানালেন আর যারা রাবারের ইউজার, তাদের রাবার আমদানি করে টায়ার বানাতে হলো, এতে লাভ কী হবে, বাংলাদেশটাকে তো বাঁচাতে হবে, নাকি বিদেশি টায়ারে দেশ ভরপুর হয়ে যাবে? রাবার বোর্ড গঠন হয়েছে আজ নয় বছর। অনেক শক্তিশালী বোর্ড। কিন্তু স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধি রাখে না। আমি রাবার বাগান মালিকদের প্রতিনিধি রাখতে বললাম, না হলে ওটাও বাদ দিত। যারা রাবারের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী, তাদের মালিক সমিতির প্রতিনিধিকে বোর্ডে রাখেন। তাহলে আমরা আপনাদের মিটিংয়ে থাকতে পারব, নইলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেই এই প্রথম রাবার বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলাম।
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি ব্যবসায় মন দিয়েছিলাম। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালের দিকে আমি রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পলের কারখানা করেছিলাম। তখন রাবার বিদেশ থেকে আমদানি হতো। আমরা খুচরা বাজার থেকে হাফ টন করে রাবার কিনে কারখানা চালাতাম। এরপর বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা রাবার বিক্রি আরম্ভ করল। মানুষ জানল, বাংলাদেশে রাবার উৎপাদন ও বিক্রি হয়। আমরা দেশি রাবার কিনেছি এবং কাজে লাগিয়েছি। কিন্তু কিছুদিন কেনার পর দেখলাম, রাবারের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। দেশি রাবার দিয়ে হাওয়াই চপ্পল বানালে তিন মাস টেকে, আর বিদেশি রাবার দিয়ে বানালে টেকে ছয় মাস। সরকারিভাবে রাবার প্রোডাক্ট করছে, বিক্রি ভালো হচ্ছে, কিন্তু কোয়ালিটির দিকে তারা নজর দিচ্ছে না। আমরা আবার আমদানির দিকে ঝুঁকলাম। তখন আবার মার্কেট প্লাস্টিকের দিকে চলে প্লাস্টিকের হাওয়াই চপ্পলের বাজার তৈরি হলো। রাবার ব্যবসায়ী ৯০ শতাংশ প্লাস্টিকের দিকে ঝুঁকে গেল।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় ও উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিটির সভাপতি মুহাম্মদ হারুন, ওয়েলকাস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আরিফ হাসনাইন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুলে মা সমাবেশে ইউএনডিপির ভুয়া কর্মকর্তা!
পরবর্তী নিবন্ধসিভিল সার্জন কার্যালয়ে ডেঙ্গু সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম চালু