আবেদনের জন্য সফটওয়্যার বানাচ্ছে চুয়েট

কর্ণফুলী গ্যাসের ১ লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্প ডিসেম্বরের মধ্যেই আবেদন গ্রহণের প্রস্তুতি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে গ্যাসের ২৪১ কোটি টাকার এক লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল)। আবেদনের সফটওয়্যার তৈরির জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাথে চুক্তি করেছে চট্টগ্রামে সরকারিভাবে গ্যাসের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের মধ্যে নতুন করে প্রিপেইড মিটারের আবেদন নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কেজিডিসিএলে ৬ লক্ষ ২ হাজার ৩৩৮ গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে আবাসিক সংযোগ রয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার। কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহকদের ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধের লক্ষ্যে ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অফ প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর কেজিডিসিএল পার্ট-৩)’ নামের তৃতীয় প্রকল্প হাতে নেয় কেজিডিসিএল। ৬০ হাজার মিটার সংযোজনে প্রথম প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে জনপ্রিয়তা পায় প্রিপেইড মিটার। যে কারণে আরও এক লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে দুই বছর আগে ২৫৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় প্রকল্পটি হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস। পরবর্তীতে পরিবর্ধন, পরিমার্জন হয়ে ২৪১ কোটি টাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পর প্র্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। তিন বছর মেয়াদী প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় নগরীর বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, চকবাজার, পাহাড়তলী, খুলশী, বাকলিয়া, সদরঘাট, কোতোয়ালী, হালিশহর, ডবলমুরিং, বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, আকবরশাহ ও জেলার কর্ণফুলী, হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলা এলাকার গ্রাহকদের পুরনো মিটারের স্থলে এসব প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
সূত্রে জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রথম প্রকল্পের ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার গ্রাহক পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) স্টেশন ক্রেডিট কিনে প্রিপেইট মিটার রিচার্জ করে গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন। ১ লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে গ্রাহকরা ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইনের মাধ্যমেও প্রিপেইড বিল পরিশোধ করার সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের এক কর্মকর্তা।
কর্ণফুলী গ্যাসের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পোস্টপেইড গ্রাহকরা প্রতি দুই চুলার মিটারে মাসে গড়ে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু প্রথম প্রকল্পে সংযোজিত প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা মাসে গড়ে ৪০-৪৮ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছেন। এতে একটি মিটারেই মাসে ২৭-২৮ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে।
কেজিডিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, কম ব্যয়ের কারণে বর্তমানে গ্যাসের গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার খুবই জনপ্রিয়। প্রথম প্রকল্পে ৬০ হাজার প্রিপেইড মিটার সংযোজনে প্রকল্পে ব্যাপক সাড়ার পর সাধারণ গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটারের জন্য প্রতিনিয়ত ধরনা দিচ্ছে। প্রথম প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকা অর্থায়ন করেছিল। বর্তমানে এক লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে কর্ণফুলী গ্যাস। তবে মিটারের মূল্য গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসে সমান কিস্তিতে আদায় করা হবে। তিনি বলেন, ২২২ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকার প্রথম প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৪৯ কোটি টাকা। এতে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। ওই হিসেবেই নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী গ্যাসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম প্রকল্পটি জাইকা অর্থায়ন করেছিল। যে কারণে প্রকল্পের কাজও তারা মনিটরিং করেছিল। পুরো কাজটি মানসম্মতভাবে শেষ হয়েছে। বিশেষ করে মিটারগুলো ছিল জাপানি। তবে চায়নাতেও মানসম্মত মিটার তৈরি করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার চাইলে চায়না থেকেই কার্যাদেশের স্পেক (মানমাত্রা) রক্ষা করে কম দামের মিটার তৈরি করে নিতে পারেন। যেটি জাপানি মিটারে সম্ভব নয়। তারপরেও যতটুকু জানি সরকারি ক্রয়নীতি অনুযায়ী পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
এক লাখ প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ও কর্ণফুলী গ্যাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম। ডিসেম্বরের মধ্যেই আবেদন গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেও আর কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুলশীতে কথা কাটাকাটির জেরে হানিফ খুন, প্রধান আসামিসহ চারজন গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবিজিবির সাথে গোলাগুলি, মাদক কারবারী নিহত