অভিষেকে হ্যাটট্রিক করে চট্টগ্রামকে জেতালেন মৃত্যুঞ্জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩২ অপরাহ্ণ

দুইশর বেশি স্কোর। শুরুতেই দুর্দান্ত বোলিং এর ইঙ্গিত। তারপরও ম্যাচের ভাগ্যটা দুলছিল একরকম পেন্ডুলামের মত। মাঝখানে এনামুল-ইনগ্রামের প্রতিরোধ। তারপর মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর এক ওভারের ম্যাজিক। হ্যাটট্রিক করে ফেরালেন তিন ব্যাটসম্যানকে। আর তাতেই ম্যাচের ভাগ্য আবার হেলে পড়ে চট্টগ্রামের দিকে। শেষ পর্যন্ত সহজ ম্যাচটাকে কঠিন করে জিতল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

ঢাকায় তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে নিজেদের মাঠ চট্টগ্রামে এসে প্রথম ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ব্যাটসম্যানরা দলকে নিয়ে গিয়েছিল রানের পাহাড়ে। কিন্তু বোলাররা সে বড় পুজিকেও নিরাপদ করে তুলতে পারেনি। ম্যাচটা জিততে হয়েছে টেনশন নিয়ে। ঢাকায় রান খরায় ভুগতে থাকা বিপিএল চট্টগ্রামে এসে রান বন্যায় যোগ দিয়েছে। আর সে রান বন্যার এক ম্যাচে সিলেটকে ১৬ রানে হারিয়ে বিপিএলে নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আর নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয়।

ক্রমশ টেনশনে পরিণত হওয়া ম্যাচের শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৩ রান। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করে মাত্র ৬ রান দিলেন। আর তাতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে চট্টগ্রাম।

টসে হেরে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামের শুরুটা ঝড়ের বেগে। দুই ওপেনার কেনার লুইস এবং উইল জেকস শুরু থেকেই চড়াও হয় সিলেটের বোলারদের উপর। তবে লুইসকে এক রকম দর্শক বানিয়ে রাখেন জেকস। শুরু থেকেই চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি ছড়াতে থাকেন জেকস। মাত্র ২৮ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েন দুজনে। যেখানে উইলসের অবদান কেবল ১২ বলে ৮। মাত্র ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পুরন করা জেকস ফিরেছেন পরের বলেই। ১৯ বলে ৭টি চার এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৫২ রান করেন জেকস। আরেক ওপেনার উইলসও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ৪ রান পর ফিরেছেন এই ক্যারিবীয়ান। তৃতীয় উইকেটে সাব্বির এবং আফিফ মিলে আরো একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন।

কিন্তু পারেননি ৪৭ রানের বেশি যোগ করতে। ২৯ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ৩১ রান করে ফিরেন সাব্বির। এরপর আফিফও টিকেননি বেশিক্ষন। দারুন খেলতে থাকা এই তরুন ফিরেছেন ২৮ বলে ৩৮ রান করে। যেখানে একটি চারের পাশাপাশি ছক্কার মার ছিল তিনটি। অধিনায়কত্ব পাওয়া নাঈম ইসলামও পারেনি ৮ রানের বেশি করতে। তবে ঝড় তোলেন বেনি হাওয়েল। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে শেষ ১০ বলে তুলে নেন ৩১ রান। শেষ পাঁচ ওভারে চট্টগ্রাম তুলেছে ৭১ রান। বেনি হাওয়েল ২১ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন।

২টি চার এবং ৩টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৪ বলে ২ ছক্কায় ১৩ রান করে। আর তাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের স্কোর গিয়ে দাড়ায় ২০২ রানে। যা এবারের বিপিএলে প্রথম দুইশ রানের দলীয় স্কোর।

দুইশ রান টপকে ম্যাচ জিততে হলে শুরু থেকেই ঝড় তুলতে হবে। সে রকমই শুরুটা করেছিলেন আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান লিন্ডল সিমন্স। প্রথম ওভারে ৯ রান তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন সিমন্স। শুরুর ধাক্কা সামলে দারুনভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এনামুল এবং ইনগ্রাম। ১১২ রানের দারুন এক জুটি গড়ে তোলেন দুজনে। শেষ পর্যন্ত ভয়ংকর হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। ৩৭ বলে ৫টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫০ রান করা ইনগ্রামকে বোল্ড করে ফেরান মিরাজ। পরের ওভারের প্রথম বলে নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন আলাউদ্দিন বাবু। এনামুল-ইনগ্রাম জুটিতে ম্যাচে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করতে যাওয়া সিলেট হঠাৎ আবার চাপে পড়ে যায়। তারপরও এনামুলের ঝড় থামানো যাচ্ছিলনা। চার আর ছক্কার ঝড় তুলে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এনামুল। ১৮ ওভারে বল করতে আসা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে পরপর দুই বলেন ছয় আর চার মেরে আরো আগ্রাসী হয়ে উঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন এনামুল। কিন্তু তৃতীয় বলে আবারো চার মারতে গিয়ে পথ হারালেন। কাভারে ধরা পড়লেন নাসুমের হাতে। থামল এনামুলের ৪৭ বলে ৭৮ রানের ঝড়। যেখানে চারের মার ছিল ৯টি আর ছক্কা তিনটি। মৃত্যুঞ্জয় পরের বলে তুলে নিলেন সিলেটের অধিনায়ক মোসাদ্দেককে। রানের খাতা খুলতে পারলেননা তিনি। হ্যাটট্রিকের সামনে দাড়িয়ে তখন মৃত্যুঞ্জয়। সামনে রবি বোপারা। দারুন এক ডেলিভারিতে এই ইংলিশকে বোল্ড করে দিলেন মৃত্যুঞ্জয়। তুলে নিলেন এবারের বিপিএলে প্রথম হ্যাটট্রিক। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা সিলেট এক ওভারেই আবার খাদের কিনারায়। ১৬ রান করে ফিরেছেন বোপারা। এরপর ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রন চলে যায় চট্টগ্রামের হাতে। শেষ পর্যন্ত ১৮৬ রানে থামে সিলেট সানরাইজার্স। মৃত্যুঞ্জয় নিয়েছেন তিন উইকেট। নাসুম নিয়েছেন দুটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ যুবক আটক
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা