অনেকেই সেরে নিচ্ছেন আগাম কেনাকাটা

ঈদ বাজারের প্রস্তুতি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৩ মার্চ, ২০২২ at ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

রমজানের বাকি আছে দশদিনের মতো। রমজান আসার আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা ঈদ বাজারের জোর প্রস্তুতি শুরু করে দেন। গত দুই বছর করোনার কারণে সেই প্রস্তুতি কিছুটা বিঘ্নিত হলেও পাল্টে গেছে এই দৃশ্য। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ঈদের কাপড় সংগ্রহ এবং সংগৃহীত কাপড় দোকান-শো রুমে সাজানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর করোনার পরিস্থিতির উন্নতির কারণে তাদের মুখে এসেছে হাসি। অন্যদিকে অনেক ক্রেতা আবার সেরে নিচ্ছেন ঈদের আগাম কেনাকাটা। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর টেরীবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওসান সিটি, শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা ও মিমি সুপার মার্কেটে বিভিন্ন কাপড়ের শো-রুমের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কর্মচারীরা নতুন জামা শো-রুমে থরে থরে সাজাচ্ছেন। তবে মার্কেটগুলোতে ঈদ বাজারের পুরোপুরি আমেজ লক্ষ্য করা না গেলেও কিছু কিছু ক্রেতা আগাম কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।
তাদের একজন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জয়নাব বাবলি। তিনি জানান, রমজান মাসে ভালোভাবে দেখেশুনে শপিং করা যায় না। গত বছর যেহেতু বেচাকেনা হয়নি, তাই ব্যবসায়ীদের কালেকশনও বলতে গেলে রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু কিছু দোকানে নতুন কালেকশনও এসেছে। তাই ঈদের শপিং করতে এসেছি।

জানা গেছে, প্রতি বছরই ক্রেতা আকর্ষণে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে তারা ঈদ বাজারের ৭০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ফলে দোকান এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে শোভা পাচ্ছে ঈদের নতুন জামা। অন্যদিকে ঈদের বাজারে ভিনদেশী পোশাকের দপটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশীয় ফ্যাশন হাউস মালিকরা। তারা জানান, আমাদের দেশে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সারাবছর কষ্ট শিকার করে আমরা ঈদের এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের গড়া মার্কেটটি ভারতীয় পণ্যের দখলে চলে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের শো-রুমে অনেক ক্রেতা এসে ভারত-পাকিস্তানের কাপড়ের খোঁজ নেন। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় পণ্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে দেশের বাজারে প্রবেশ করে। অথচ আমাদের পণ্যের গুণগত মান ভারত-পাকিস্তানের পণ্যের চেয়ে অনেক ভালো। তারপরেও আমরা আশা করছি, এ বছর সব বয়সী ক্রেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশীয় পোশাকই।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদের বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকি। গত দু্‌ই বছরের করোনার প্রকোপ বাড়ার কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারিনি এটি তো আপনারা জানেন। তবে এবার আমরা আশাবাদী। ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যবসায়ীরা এ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎফুল্ল। আশা করি পুরো রমজান মাসে বেচাবিক্রিতেও সেই উৎফুল্লভাব বজায় থাকবে।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে বাহারি ডিজাইনের পোশাক সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছেন। জহুর হকার্স মার্কেট সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য সবশ্রেণীর পেশার জন্য একটি আদর্শ মার্কেট। এই মার্কেটে ক্রেতারা কম দামে সব সময় ভালো পণ্যটি পেয়ে থাকেন। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আমাদের জন্য এবার স্বস্তিদায়ক হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি। গত দুই বছর আমরা করোনার কারণে ঈদ বাজার হারিয়েছিলাম। তবে এবার সেইদিক থেকে ব্যতিক্রম। করোনার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারবেন বলে আমরা আশা করি।
আফমি প্লাজার ফ্যাশন হাউস ‘কৃষ্টি বুটিক’ এর স্বত্বাধিকারী নুজহাত নুয়েরি কৃষ্টি দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের শো রুমে বিশেষ করে নকশি কাঁথার ডিজাইনে হাতের কাজের সেলোয়ার কামিজ, শাড়ি, ফতুয়ার ব্যাপক চাহিদা আছে। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। দেশীয় পোশাক শিল্পকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে আমাদের মতো উদ্যোক্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সরকারের কাছ থেকে আমরা পর্যাপ্ত পৃষ্টপোষকতা পাচ্ছি না। দিন দিন পোশাক তৈরির অত্যাবশকীয় উপাদান বোতাম ও সুতার মতো উপাদানের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বিদেশি পোশাকের দাপটেও আমরা কিছুটা অসহায়। বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে বিদেশি কাপড়ের প্রদর্শনী হচ্ছে, এতে দেশীয় পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় মার খেয়ে যাচ্ছে।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত দুই বছর আমরা করোনার কারণে ব্যবসা করতে পারিনি। তাই ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনেছেন। আমাদের তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির অধীনে প্রায় ১১০টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত কাপড়চোপড় সংগ্রহ করেছেন। অনেকে বিদেশ থেকে পোশাক আমদানি করেছেন। এছাড়া আমরা স্থানীয়ভাবেও অনেকে পোশাক তৈরি করছেন। অতীতের লোকসান লাগবে সবাই এখন সামনের ঈদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা আশা করি আসছে ঈদে ক্রেতাসমাগমও ভালো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির শাটলের ছাদ থেকে পড়ে আহত শিশু
পরবর্তী নিবন্ধপণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার